গৃহবধূর সম্পত্তি গেল সিটি ব্যাংকের হাতে, ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর ‘নকল’ করে আদেশের কপি

২০২০ সালের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার বরাবরে দুই শতাংশ কেনা জায়গার নামজারির আবেদন করেন পতেঙ্গা থানার হোসেন আহমদ পাড়ার বাসিন্দা গৃহবধু নার্গিস সুলতানা। নামজারির খবর জানতে কয়েকবার ভূমি অফিসের গিয়েও সমাধান পাননি তিনি।

২০২০ সালে করোনার ইস্যু দেখিয়ে কাজটি ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘ সময়। একই বছরের শেষের দিকে নামজারি বিষয়টি অবগত করে একটি নোটিশের প্রক্ষিতে ভূমি অফিসের গিয়ে দেখেন, গৃহবধুর জায়গাটির দাবিদার অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। পরে নোটিশের নামজারি নিয়ে একবার শুনানীও করে ভূমি অফিস। শুনানীতে দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে পরবর্তীতে বিষয়টি অবগত করা হবে জানিয়ে গোপনে বাতিল করে আবেদনটি।

সম্প্রতি নামজারির খবর জানতে ভূমি অফিসে যান ওই গৃহবধু। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আপনার শুনানি আর হবেনা। জায়গাটি অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের।’ পরে সাবেক সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদের স্বাক্ষর জাল করে ধরিয়ে দেয় শুনানীর আদেশের নকল কপি।

ওই নারীর অভিযোগ, একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে কৌশলে নামজারি আবেদনটি খারিজ করে দেন ভূমি অফিসের একটি চক্র। নামজারি করতে আরও বেশ কিছু কাগজ আনার কথা বলে বিভিন্ন সময় গৃহবধুকে অফিসে ডেকে হয়রানিও করেছে চক্রটি।

গৃহবধুর অভিযোগ, তাকে আদেশের যে কাগজটি দিয়েছে তাতে দেখা গেছে নোটিশ ও আদেশের থাকা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) স্বাক্ষরের মিল নেই। তারা কাজটি করে দিবে বলে শুধু আশ্বাসের উপর রেখে গোপনে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ করেছে। শুনানীতে যে, তার আবেদন খারিজ করেছে সেটা জানতে পেরেছেন তিনি প্রায় দুই বছর পর, তাও অফিসে গিয়ে।

Yakub Group

এদিকে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে ভূমি অফিস থেকে দেওয়া নোটিশ ও আদেশের কপি নিয়ে হাজির হন প্রতিবেদক।

বিষয়টি সঠিক কিনা জানতে চাইলে ভূমি অফিসের নাজির অরুন কান্তি মল্লিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্যারের (এহসান মুরাদ) স্বাক্ষর যাই থাকুক না কেন, আদেশ ঠিক আছে দেখুন। জায়গাটি সিটি ব্যাংক নিলাম করে বিক্রিও করে দেয়।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে অফিস মূল বালাম বই এনে দেখানো হলে সেখানে দেখা গেছে আদেশের যে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে সহকারী কমিশনারের, ওই স্বাক্ষরের সঙ্গে আদেশের স্বাক্ষরের মিল নেই। আদেশে যে তিনজনের স্বাক্ষর করা হয়েছে বালামের বইয়ের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি দুই শতক জায়গাটি ক্রয় করেন পতেঙ্গা থানার উত্তর পতেঙ্গা হোসেন আহমদ পাড়ার হোসেন কন্ট্রাক্টরের বাড়ির সালাউদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস সুলতানা। উত্তর পতেঙ্গা মৌজা। জায়গার দলিলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৪১৫।

স্বাক্ষরের বিষয়টি জানতে চাইলে পতেঙ্গা ভূমি অফিসের সাবেক সহকারী কমিশনার এহসান মুরাদ অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘মনে হয় স্বাক্ষরটি নকল’। পরে তিনি নোটিশ ও আদেশের কপি সরবরাহ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘সম্ভবত স্বাক্ষরটি নকল।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি ওই নারীকে বলেছি, ভূমি অফিসের শুনানী সন্তুষ্ট না হলে আপীল করার সুযোগ আছে। আপীলের রায় যদি ওনার পক্ষে যায়, তাহলে আবার জায়গা ওনি ফেরত পাবে। তারপরও আমি বিষয়টি দেখব।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm