চট্টগ্রামে চার তরুণের দুই চাকার যাত্রা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে স্যোশ্যাল এন্ড এনভায়রনমেন্ট ইনক্রিজিং এনালাইসিস মুভমেন্ট (এসইআইএএম) এর চার তরুণ তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাইক্লিং অভিযান চালাচ্ছেন। ‘আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ দেশের আশায় দুই চাকার যাত্রা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই অভিযান ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।

চট্টগ্রামে চার তরুণের দুই চাকার যাত্রা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি 1

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে সাইক্লিং টিম চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা) পক্ষ থেকে সাইকেল আরোহীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ব্রিফিং সেশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— ইপসার প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের প্রতিনিধি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. আহসানুল হক, আদিত্য রক্ষিত, সেবু বড়ুয়া, সুমাইয়া তাহসিন, ভিজিত সায়াম, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের জেলা ম্যানেজার সাজেদুল আনোয়ার ভূঁঞা, প্রোগ্রাম ও ফিনান্স সহকারী আব্দুর রহমান।

ব্রিফিং সেশনে মাহথির মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের মা। মায়ের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সন্তান ভালো থাকতে পারে না। তাই দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ, কার্বন ফ্রি এনভায়রনমেন্ট, বিষমুক্ত খাবার এবং মাঠ, পার্ক ও জলাশয় সংরক্ষণের দাবিতে আমরা স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের যাত্রা তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত। পথিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি, কারণ এরা একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।’

ইপসার প্রকল্প কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, সেবু বড়ুয়া ও সুমাইয়া তাহসিন পরিবেশ রক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের বিবরণ দেন। তারা বলেন, চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। সরকারের নীতি নির্ধারক ও স্থানীয় প্রশাসককে আন্তরিক ভূমিকা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

জেলা ম্যানেজার সাজেদুল আনোয়ার বলেন, ‘আজ চার তরুণ তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ যাত্রা শুরু করেছেন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের আরিফুর রহমান ১৯৮৫ সালে সমাজিক উদ্যোগ ভিত্তিক কাজ শুরু করেছিলেন, যা আজ ইপসা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তরুণরা যেসব বিষয় নিয়ে সাইকেল যাত্রা শুরু করেছে, ইপসা সেই সব ইস্যুর সঙ্গে সহমত পোষণ করছে।’

ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, প্রায় ৭০% মানুষ সংক্রমণজনিত রোগে মারা যায়। হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সার খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশে তরুণদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করাই স্থায়ীত্বশীল উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচ তরুণ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ১৭টি জেলায় সাইকেলে যাত্রা চালাচ্ছেন, যা দেশের তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়।

ব্রিফিং শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা, নতুন তামাক কোম্পানির অনুমোদন না দেওয়া, পরিবেশ দুষণজনিত রোগ প্রতিরোধে পরিবেশ আদালত আইন ও সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে নাগরিকদের মামলা করার অধিকার নিশ্চিত করা, প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত স্থাপন, যুবকদের জন্য মাঠ, পার্ক ও গণপরিসর তৈরি ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা, সংস্থাগুলোর জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াত নিশ্চিত করতে পথচারী ও সাইকেল লেন তৈরি এবং নিরাপদ খাদ্য ও পানি নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম জাদিদ গ্রহণ করেন।

ksrm