পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে চট্টগ্রামেই। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে চট্টগ্রাম জেলায় পানিতে ডুবে অন্তত ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা দেশের যে কোনো জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। একই সময়ে শরীয়তপুরে সবচেয়ে কম ৪ জন মারা গেছে। অন্যদিকে গত ১০ মাসে নৌযান দুর্ঘটনা বাদে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে— ৩১৬ জন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টির তৈরি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সারাদেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১০ মাসে চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৫৭ জনের মধ্যে ৪৭ জনের বয়স নয় বছরের কম। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে এসব শিশুরা পানির সংস্পর্শে গিয়ে মারা যায়। তাদের মধ্যে ১৩ জন কন্যাশিশু ও ৩৪ জন ছেলেশিশু রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম ছাড়াও এ সময়ে আরও ১৩টি জেলায় জেলাপ্রতি অন্তত ৩০ জন বা তার বেশি সংখ্যক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ৫২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫১ জন, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহে ৪৮ জন, নোয়াখালীতে ৪১ জন এবং চাঁদপুরে ৩৯ জন রয়েছেন। গত ১০ মাসে পানিতে ডুবে সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে শরীয়তপুর জেলায়। এ জেলায় মারা গেছেন চারজন। এছাড়া একই সময়ে তুলনামূলক কম মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে নড়াইল, মাগুরা, বান্দরবান, রাজবাড়ী ও খুলনা জেলাগুলো। এসব জেলায় জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জেলাপ্রতি মৃত্যু ছিল ২ থেকে ৫ জনের মধ্যে।
সমষ্টির গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ মাসে নৌযান দুর্ঘটনা বাদে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম বিভাগে— ৩১৬ জন। এছাড়া ঢাকায় ২৪০ জন, রাজশাহীতে ১৫৮, ময়মনসিংহে ১৩০, বরিশালে ১২৪, রংপুরে ১০৮, খুলনা বিভাগে ১০৪ জন মারা যায়। এ সময়ে সবচেয়ে কম মৃত্যু ছিল সিলেট বিভাগে ৬৯ জন।
সমষ্টির বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, গত ১০ মাসে ৯১৭টি ঘটনায় পানিতে ডুবে এক হাজার ২৪৯ জন মারা যান। এর মধ্যে এক হাজার ১২২ জন পানিতে ডুবে এবং ১২৭ জন নৌযান দুর্ঘটনায় ডুবে বা আহত হয়ে মারা যায়। যাদের ৮৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। মোট মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে চার বছর বা তারও কম বয়সীর সংখ্যা সবচয়ে বেশি, ৫৩৮ জন। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৩৬৪ জন, ১০ থেকে ১৪ বছরের ১০৩ জন এবং ১৫ থেকে ১৮ বছরের ৩৯ জন। ২০৫ জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ৭৯ শতাংশ ঘটনা দিনের বেলায় ঘটেছে— এমন তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনের বেলায় শিশুরা পানির সংস্পর্শে বেশি যায়। ১০ মাসে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫০৬ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৪৫৪ জন মারা যায়। তবে রাতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা বা রাতে ২৮৯ জনের মৃত্যু হয়।
বর্ষাকাল ও এর আগে-পরের (জুন-অক্টোবর) মাসগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২১ সালে পানিতে ডুবে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২১০ জন মারা যায় আগস্ট মাসে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল জুলাই মাসে ১৫৭ জন। তবে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসেই শতাধিক মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় বলে জানায় সমষ্টি।
সমষ্টি জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে। পানিতে ডুবে ১২৪৯টি মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশ (১১৩১) ঘটে পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়িসংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। একই পরিবারের একাধিক সদস্য পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে।
গত ১০ মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮৩টি পরিবারের ১৬৬ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়। যাদের মধ্যে শিশুর সঙ্গে ভাই অথবা বোনসহ ১৪৪ জন, মা–বাবাসহ ৮ জন, দাদা-দাদি বা নানা-নানিসহ ৪ জন ও চাচা-খালাসহ ১০ জন মারা যায়। উৎসব বা অন্য কোনো সময়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে একই পরিবারের বেশির ভাগ শিশু মারা যায়।
সিপি