ইয়াবা বিক্রি ও পাচারের জন্য রীতিমতো রাখা হয়েছে বিক্রয় প্রতিনিধি। ওই প্রতিনিধিরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে পৌঁছে দেয় ইয়াবা। ফটিকছড়ি-ফেনী-রামগড়ের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সেই ইয়াবা পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম শহরে। সেখান থেকে ফেনী, কুমিল্লা ও ঢাকায়। আর ইয়াবার এই কারবারে জড়িত সুব্রত কুমার নাথ নামের এক যুবক। সাংবাদিক সেজে আড়ালে মূলত এই অপকর্মই করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। সূর্যোদয় নামের একটি অনলাইনের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে ওই যুবক সাংবাদিক তো নয়ই, পত্রিকাটিরই অস্তিত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের করেরহাট নয়টিলা মাজার এলাকা থেকে ৮ হাজার ৬০০ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সুব্রত কুমার নাথ নামের ওই কথিত সাংবাদিককে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ছাগলনাইয়া মধুগ্রাম ক্যাম্পের সদস্যরা। তাকে আটকের পর বেরিয়ে আসছে আরও নানা তথ্য।
জানা গেছে, ইয়াবার ডিলার সুব্রত কুমার নাথ সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে উত্তর চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছেন একটি বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট। মিরসরাই, সীতাকুণ্ড উপজেলাসহ ফটিকছড়ির দাঁতমারা, বাগানবাজার, নারায়ণহাট ইউনিয়নে রয়েছে তার বিক্রয় প্রতিনিধি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে মূলত ঢাল হিসেবেই ব্যবহার করতো সাংবাদিক পরিচয়কে। বনিবনা না হলে হয়রানিমূলক ‘সংবাদ’ ছাপানোর হুমকি দিতেন সুব্রত। এমনকি ‘নিউজ’ করার হুমকি দিয়ে পুলিশকেও ব্ল্যাকমেইলিং করার চেষ্টা করতেন। ৫২ বছর বয়সী সুব্রত কুমার নাথের পিতার নাম নারায়ণ চন্দ্র নাথ।
বাগানবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাজু বলেন, তার কাজই ছিল মূলত ইয়াবা ব্যবসা। এলাকার পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে গেছে ইয়াবা। সুব্রত কুমার নাথ ঢাকায় থাকেন বলে জানি। এলাকায় আসলে নিজেকে বড় সাংবাদিক পরিচয় দেন। বিজিবির হাতে ধরা পড়ার পর তার মূল মুখোশ ফাঁস হয়েছে।
দাঁতমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ পারভেজ হোসেন বলেন, ‘সুব্রত কুমার নাথ দাঁতমারা এলাকায় এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। সেই সাথে চালিয়ে যাচ্ছিল ইয়াবা ব্যবসা। তার বেশ কিছু ইয়াবা বিক্রয় প্রতিনিধি রয়েছে এলাকায়। সে দাঁতমারায় ঘন ঘন আসতো। ইয়াবা নিয়ে শহরে চলে যেত। সে নিজেও পাচার করতো। প্রতিনিধি দিয়েও পাচার করতো। এলাকায় তার ওঠাবসা চলাফেলা সবসময় সন্দেহজনক ছিল। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় আমরা এতোদিন কিছু করতে পারিনি।’
দাঁতমারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা কমরুজ্জামান কমল বলেন, ‘দাঁতমারা ও বাগানবাজার ইউপির শত শত নিরীহ মানুষকে কারণে-অকারণে হয়রানি করেছিল মিথ্যা নিউজ প্রকাশ করে। আবার নিউজ মিনিমাইজ করার নামে টাকা আদায় করতো। তার হুমকিতে এলাকার নিরীহ মানুষ অতিষ্ট।’
বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল একেএম আরিফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের অভিযানে ৮ হাজার ৬০০ পিস ভারতীয় ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একজন আসামি আটক করা হয়েছে। সে দৈনিক সূর্যোদয় পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি বলেও পরিচয় দেন বিজিবিকে। পরে তাকে জোরারগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সে ইয়াবা কারবারের বড় ডিলার বলে আমরা জানতে পেরেছি। তার বিরুদ্ধে যাবতীয় তদন্ত করবে পুলিশ। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।’
বিজিবি জানিয়েছে, গোপন সূত্রে তারা জানতে পারে, সীমান্ত পিলার ২২০৩/২-আরবি থেকে বাংলাদেশের ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে জোরারগঞ্জ থানাধীন নয়া টিলা মাজার নামক এলাকা দিয়ে ইয়াবার একটি বড় চালান আসছে। রামগড় এলাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে প্রবেশ করতে পারে। বিজিবি একটি বিশেষ টহল দল ওই এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে মোটরসাইকেলসহ আরোহীকে আটক করে। পরবর্তীতে মোটরসাইকেল তল্লাশি করে অভিনব কায়দায় মোটর সাইকেলের সিটের নিচ থেকে ৮ হাজার ৬০০ পিস ভারতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর হোসেন মামুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিজিবি আটক করে আমাদের থানায় ইয়াবাসহ সুব্রতকে সোপর্দ করেছে। তার বিরুদ্ধে আমাকে ফোন করে অনেক তথ্য লোকে দিচ্ছেন। সে বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। পত্রিকার আড়ালে ইয়াবা পাচার তার কাজ। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে আমি অনেক তথ্য প্রকাশ করতে পারছি না। তবে তার ইয়াবার নেটওয়ার্কে পুলিশ হানা দেবে।
এদিকে জানা গেছে, দুই বছর আগে সুব্রত কুমার নাথ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক বায়েজিদ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি সূর্যোদয় নামের একটি পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। অনলাইনে দেখা যায়, ওই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মেজর (অর) মোদাচ্ছের হোসেন এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক তৌহিদ আহমেদ রেজা।
এএস/সিপি