চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে নারী সাংবাদিক লাঞ্ছনার ঘটনায় থানায় জিডি

নওফেলের সহচর রেজাউল করিমের দাপট কমছেই না

চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের নির্দেশে সাংবাদিক শারমিন রিমাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আবেদন করা হয়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১১টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরির আবেদন করেন ভুক্তভোগী শারমিন রিমা। তিনি চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল সিভয়েস২৪’এর প্রতিবেদক।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী সাংবাদিক শারমিন রিমা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জিডির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য যাচাই ও মন্তব্যের প্রয়োজনে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান রেজাউল করিমকে গত ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৪টা ৫৯ মিনিটে কল করি। এসময় ২ মিনিট ৪৭ মিনিটে কথোপকথনে তাকে বোর্ডে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত করি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৭ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে যাই। বোর্ড চেয়ারম্যান পাশের সম্মেলন কক্ষে থাকায় তার মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের কক্ষে অপেক্ষা করি। আনুমানিক ১০ মিনিটের মাথায় একজন কর্মচারীকে পাঠিয়ে তার জন্য আরও বেশি সময় অপেক্ষা করার কথা জানান। আমি অপেক্ষারত থাকা অবস্থায় চেয়ারম্যান মহোদয় তার কক্ষে এসে আমার ওপর চড়াও হন।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ সময় আমাকে কথা বলার সময় সুযোগ না দিয়ে তিনি ‘পেইড এজেন্ট’ বলে তার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বোর্ডের কর্মচারীদের আনসার ডাকতে বলেন। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের এক পর্যায়ে তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও প্রদান করেন। পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডের অন্য কয়েকজন কর্মকর্তাও আমার ওপর চড়াও হন। যা পরবর্তীতে আমার পেশাগত কাজে শিক্ষাবোর্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করছি।’

এ প্রসঙ্গে শারমিন রিমা বলেন, ‘প্রাপ্যতাবিহীন সাড়ে ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে সোমবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে আমি তার কক্ষে অপেক্ষা করি। প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষার পর তিনি একজনকে আমার কাছে পাঠান। তিনি এসে আমাকে বলেন, ‘স্যার ফোনে কথা বলছেন, আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। সময় লাগবে একটু।’ উত্তরে আমি সায় দিয়ে অপেক্ষা করবো বলে জানাই।

রিমা বলেন, ‘এরপর বিকেল ৩টার দিকে রেজাউল স্যার ভেতরের আরেকটি রুম থেকে বের হয়েই আমার কোনো কথা না শুনে আমার সঙ্গে রাগান্বিত হয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করে বলতে থাকেন, ‘আপনি কার পেইড এজেন্ট হয়ে এসেছেন? আমার চরিত্র হনন করতে এসেছেন। আপনার সঙ্গে আমি কথা বলবো না। এই মুহূর্তে আপনি রুম থেকে বের হয়ে যান।’ এই বলেই তিনি কয়েকজন কর্মচারীকে ডেকে আমাকে রুম থেকে বের করে দিতে বলেন। তখন আমি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাই, কেন তিনি আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন।’

সাংবাদিক রিমা বলেন, ‘এরই মধ্যে তিনি আরও কয়েকজন কর্মচারীকে ডেকে সেখানে কর্মরত আনসার সদস্যদের দিয়ে আমাকে বের করে দিতে বলেন এবং আমার সঙ্গে অশোভন-ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং খুবই দুর্ব্যবহার করেন।’

শারমিন রিমা আরও জানান, সম্প্রতি আমি ‘শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান নিয়ে গুঞ্জন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করি। ওই সংবাদের একটি অংশে উল্লেখ ছিল—বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সচিব থাকাকালীন ওএমআর শিট সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হাতে হাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১২ জুন আমি একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। এসব নিয়ে তিনি আমার ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলেন।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm