যাত্রীদের জিম্মি করে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের সারাদেশে ডাকা ধর্মঘটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। ট্রেন চলাচল নিয়ে রানিং স্টাফ নেতা ও রেলওয়ের মধ্যে আলোচনা হলেও কোন সুফল আসেনি। এজন্য মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১২টা পর্যন্ত সকল ট্রেনের টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে।
তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা মনে করছেন, নাগরিক দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হয়তো আগামীকাল থেকেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করবেন রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত মাইলেজে, পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেয়। এরপর থেকে কোনো ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়নি। এতে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন।
তবে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে নিয়োগ পাওয়া রানিং স্টাফরা কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজের জন্য মূল বেতনের চেয়ে কম অ্যালাউন্স প্রাপ্য হবেন—এমন শর্তেই চাকরিতে প্রবেশ করেছেন।
টিকিটের মূল্য ফেরত দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কাউন্টারে যাত্রীরা ভিড় করেন। তারা কাউন্টার ও অনলাইন টিকিটের মূল্য ফেরত নেন।
রেলভবনে বৈঠকে থাকা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রানিং স্টাফদের সঙ্গে রেলওয়ের আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি। পরে রাজনৈতিক নেতা ও অন্য একটি পক্ষ আলোচনায় এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা সেই বৈঠকেও কোনো সমাধান আসেনি।
রানিং স্টাফ সমিতির নেতাদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ মূল কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত কাজ করলে মাইলেজ পাওয়ার কথা। এছাড়া কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছরের। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট অর্থ বিভাগের ৯১ নম্বর স্মারকে জারি করা পত্রে রানিং স্টাফ হিসেবে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভ্রমণ ভাতা বা দৈনিক ভাতার পরিবর্তে রেলওয়ে এস্টাবিলিশমেন্ট কোডের বিধান অনুযায়ী রানিং অ্যালাউন্স পাওয়ার কথা জানানো হয়। এবং এটি বেতনের চেয়ে বেশি হবে না। এনিয়ে রানিং স্টাফ ও রেলওয়ের মতৈক্যর ফলে ট্রেন চালানো বন্ধ রাখে রানিং স্টাফ কর্মচারীরা।
রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, ‘আজ রেলভবনে আমাদের ও রেলওয়ের মধ্যে সারাদিন দফায় দফায় আলোচনা হলেও কোনো সমাধান আসেনি। রাতে কোনো সমাধান না হলে আগামীকালও (বুধবার) ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন বলেন, ‘রানিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে রেলওয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ রাতেই চলাচল করতে পারে রেল। সবাই মিলে দোয়া করি, যেন সংকট কেটে যায়।’
সিএম/ডিজে