জিলকদ মাস হিজরি সনের একাদশতম মাস এবং হজের তিন মাসের দ্বিতীয় মাস। এটি চারটি হারাম মাসের মধ্যে তৃতীয় মাস। এই মাসটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত, তাই এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
জিলকদ মাসের অর্থ ও তাৎপর্য
আরবি শব্দ জুলকা’দাহ অর্থ “বিশ্রামের মাস”। প্রাচীন আরবে এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল, মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও ইবাদতের জন্য প্রস্তুতি নিত। রমজান, শাওয়ালসহ পূর্ববর্তী কয়েক মাস ধরে মুমিনগণ ব্যাপক ইবাদতের মধ্যে কাটানোর পর জিলকদ মাসে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান, যাতে পরবর্তী দুই মাস—জিলহজ (হজ ও কুরবানি) ও মহররম (আশুরা)—এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
জিলকদ মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ইসলামের ইতিহাসে জিলকদ মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে সংঘটিত কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো:
– হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদিত হয়, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
– বাইয়াতে রিদওয়ান সংঘটিত হয়, যেখানে সাহাবায়ে কেরামের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি নাজিল হয়।
– নবম হিজরিতে এই মাসেই হজ ফরজ হয়।
– হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্ম এই মাসে হয় বলে বর্ণিত আছে।
– পৃথিবীতে কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন এই মাসে হয়েছিল বলে কিছু বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে।
– রাসুলুল্লাহ (সা.) সপ্তম হিজরিতে প্রথম উমরাহ পালন করেন এই মাসেই।
জিলকদ মাসের আমল
যদিও এই মাসে কোনো নির্দিষ্ট ফরজ ইবাদত নেই, তবুও নফল আমলের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেওয়া উত্তম:
– নফল রোজা: মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে, আইয়ামে বীদ (১৩, ১৪, ১৫ তারিখে) এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা মুস্তাহাব।
– অতিরিক্ত নামাজ: তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আউওয়াবিন নামাজ পড়া এবং সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
– কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির: বেশি বেশি কুরআন পড়া ও আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা।
– দান-সদকা: গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
– হজ ও কুরবানীর প্রস্তুতি: যারা হজে যাবেন, তাদের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং কুরবানীর ইচ্ছা থাকলে অর্থ সঞ্চয় করা।
মহান শিক্ষা ও উপদেশ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে গুরুত্ব দাও: যৌবনের আগে বার্ধক্যকে, সুস্থতার আগে অসুস্থতাকে, সম্পদের আগে দারিদ্র্যকে, অবসরের আগে ব্যস্ততাকে এবং জীবনের আগে মৃত্যুকে।” (তিরমিজি)
জিলকদ মাস হলো আত্মসমালোচনা ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির মাস। এই সময়ে আমরা আমাদের গুনাহ থেকে তাওবা করে আগামী দিনগুলোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করব।
একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
“আল্লাহুম্মা রাজ্জুকনা হাজ্জাম মাবরুরা ওয়া জান্নাম মাগফুরা ওয়া সায়াম মাশকুরা ওয়া তিজারাতান লান তাবুর।”
(হে আল্লাহ! আমাদেরকে মাকবুল হজ দান করুন, ক্ষমাপ্রাপ্ত জান্নাত দান করুন, কবুল হওয়া রোজা দান করুন এবং এমন ব্যবসা দান করুন যা কখনো ক্ষয় হয় না।)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন এবং হজ ও কুরবানীর সঠিক প্রস্তুতি নেওয়ার সামর্থ্য দান করুন। আমিন।
লেখক: ইসলামিক গবেষক ও কলামিস্ট