দ্বিতীয় বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে থাকলেও সোহাগ নামের তরুণটি একইসঙ্গে যেতেন প্রথম স্ত্রীর কাছে। এর পাশাপাশি তিনি প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন আরেক মেয়ের সঙ্গেও। দীর্ঘদিন এভাবে চলে আসলেও একসময় সোহাগের ওই দুই সম্পর্কের কথা জেনে যান দ্বিতীয় স্ত্রী মুক্তা বেগম। এ নিয়ে কলহ চলতে থাকলে একপর্যায়ে শ্বাসরোধে মুক্তাকে খুন করেন সোহাগ। খুন করেই সোহাগ পালিয়ে চলে আসেন চট্টগ্রামে।
গত ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের মিজমিজি পূর্ব পাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে মুক্তা বেগমের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোহাগের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
সিআইডি জানায়, মুক্তা বেগমের হাত বাঁধা ছিল তোয়ালে দিয়ে, পা বাঁধা ছিল লুঙ্গি দিয়ে। হত্যাকাণ্ডের পর সোহাগ চট্টগ্রাম চলে যায়। সেখান থেকে রাজধানীর পল্লবীতে প্রথম স্ত্রীর কাছে আসার পর বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানিয়েছেন, মুক্তা বেগম ও সোহাগ উভয়ই সিদ্ধিরগঞ্জে পৃথক দুটি কারখানায় চাকরি করতেন। অন্য এক গার্মেন্টস কর্মীর মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে মুক্তা বেগম ও সোহাগের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ টাকা কাবিনে স্থানীয় কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করে ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন। ২০২১ সালে মুক্তা অন্তঃসত্ত্বা হলে তার গর্ভপাত করানো হয়।
এর আগে ২০১৫ সালে পটুয়াখালীর বাউফল থানার কনকদিয়া গ্রামের বিলকিস বেগমের সঙ্গে সোহাগের প্রথম বিয়ে হয়। ওই সংসারে তার ৫ বছরের একটি সন্তান আছে। প্রথম বিয়ের বিষয়টি মুক্তা বেগমকে না জানিয়ে বিলকিস বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ এবং বিবাহবহির্ভূত অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সোহাগ।
এসব বিষয়ে সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মুক্তা বেগম। এতে তাদের মধ্যে কলহ হয়। এর জের ধরে মুক্তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সোহাগ। লাশ ঘরের মেঝেতে রেখে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ঘর তালাবদ্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চট্টগ্রামে পালিয়ে যান তিনি।
ঘটনার পর পরই ভিকটিমের চাচা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২৫ জানুয়ারি মামলা করেন। মামলার সূত্র ধরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।