রেলে পুরনোদের আটকে রেখে নতুন লোক নিতে বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগবিধি নিয়ে জটিলতা

0

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ১ হাজার ৬৮৪টি পদের বিপরীতে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় প্রায় তিন বছর আগে। এরপর ১৯৮৫ সালের রেলওয়ের নিয়োগবিধি অবৈধ ঘোষণা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ওই পদগুলোয় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল অন্যান্য পদেও নিয়োগ প্রক্রিয়া।

তবে এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান না করেই নতুন জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রেলওয়ে। যার ফলে এক হাজার ৬৮৪টি পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি বাতিল করে ২০২০ সালে নতুন নিয়োগ বিধি প্রণয়ন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এরপর চলতি মাসে নতুন করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেলওয়ে। সেখানে বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। একইসাথে আটকে থাকা এক হাজার ৬৮৪ পদের আবেদনকারীও আইনি পথে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১৩টি ক্যাটাগরিতে ১ হাজার ৩২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের রেল নিয়োগবিধির অধীনে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান ছিল। তবে ২০১৯ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওই নিয়োগবিধি অবৈধ ঘোষণা করে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে পশ্চিমাঞ্চলে ১২টি ক্যাটাগরিতে ৬৫২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াও আটকে যায়।

২০২০ এর নভেম্বরে রেলের নতুন নিয়োগবিধি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। তবে নতুন নিয়োগবিধিতে বিভিন্ন পদের বিপরীতে আবেদনের যোগ্যতা ও শর্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পাসের পরিবর্তে ন্যূনতম যোগ্যতা এসএসসি রাখা হয়েছে। এছাড়া কোটার হারও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

নতুন নিয়োগবিধিতে দেখা যায়, অফিস সহকারী পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে এইচএসসি/সমমান পাস। আবার পয়েন্টসম্যান পদেও চাওয়া হয়েছে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, অফিস সহকারীর সমযোগ্যতার হওয়ায় তার নির্দেশনা কেন পালন করবেন পয়েন্টসম্যানরা?

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মো. মনিরুজামান মনির বলেন, রেলপোষ্যদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি নতুন নিয়োগবিধিতে। এর ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘রেলওয়ে ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ দ্রুত সংশোধন করে নিয়োগবিধি ১৯৮৫ অনুযায়ী পোষ্যর সংজ্ঞা, নিয়োগ পদ্ধতি, পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ, সরাসরি নিয়োগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রেলওয়ে নিয়োগ ব্যুরো ও পূর্বাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক কর্তৃক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান পুনর্বহাল করাসহ ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়োগ আগে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের হাতে থাকলেও এখন তা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হাতে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, ২০ গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগ ছিল এইএন লেবেলের কর্মকর্তার হাতে। কিন্তু নতুন নিয়োগবিধিতে সেটা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে।

পুরোনো নিয়োগবিধির সাথে নতুন নিয়োগবিধির সাংঘর্ষিক বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের মতামত জানতে চাওয়া হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে মন্ত্রী যেসব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন বিধির শর্ত পুরনোটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন। তবে যেসব পদের বিপরীতে শর্ত পরিবর্তন করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন গ্রহণের পরামর্শ দেন রেলপথমন্ত্রী।

পরে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে রেলওয়েকে লিখিত প্রস্তাব পাঠাতে অনুরোধ করেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনার আশ্বাসও দেন তারা। কিন্তু বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানে আসেনি।

জানা গেছে, সে সময় রেলের বিভিন্ন শূন্য পদেও নতুন করে নিয়োগের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশনা দেন রেলপথমন্ত্রী। এরপর চলতি মাসে খালাসী পদে এক হাজার ৮৬ জন লোক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রেলওয়ে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সারওয়ার আলম বলেন, ১৯৮৫ ও ২০২০ সালের নতুন নিয়োগবিধি পড়েছি। নতুন নিয়োগবিধিতে বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ে মহাপরিচালককে মুঠোফোনে কল ছাড়াও এসএমএস দিয়েও সাড়া মেলেনি।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm