চট্টগ্রামের বিশেষায়িত ইমপেরিয়াল হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে এ পর্যন্ত ৫ হাজার রোগীকে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. রবিউল হোসেন বলেছেন, দেশে স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন সংকট রয়েছে, সববিষয় বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে ৪০০ শয্যার হাসপাতালটি যাত্রা করে ২০১৯ সালের ১৫ জুন। কিন্তু করোনা কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে আমরা ৫০ শয্যার একটি আলাদা কোভিড ইউনিট করি। উন্নত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি ২৫টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড ও ২৫টি আইসোলেশন কেবিনে। সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থায় চিকিৎসক, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে ৭০ জনের এই টিম পুরো দেশে অনন্য কোভিড ইউনিট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
রোববার (২০ জুন) দুপুর ১২টায় ২য় বর্ষপূতি উপলক্ষে হাসপাতালের অডিটোরিয়াম রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে হাসপাতালের একাডেমিক কোঅর্ডিনেটর ডা.আরিফ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি ও ট্রেনিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান ও ইমপেরিয়াল হাসপাতালের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের সিনিয়র সদস্য এমএ মালেক। উপস্থিত ছিলেন ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠিতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, করোনাকালীন যারা শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম তাদের নমুনা বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নগরীর বাইরে মোবাইল টিমের মাধ্যমে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, উখিয়া, ভাসানচরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ইমপেরিয়াল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের প্রখ্যাত হার্ট সার্জন ডা. দেবী শেটির প্রতিষ্ঠিত নারায়ন হেলথের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানদের সমন্বয়ে ৪০ জনের একটি টিম চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে ২৬টি ওপেন হার্ট সার্জারী, ২৩৯টি বিভিন্ন প্রসিডিউরসহ বর্হিবিভাগে ৭০০০ এর অধিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে শিশুদের প্রয়োজনের তুলনায় গুনগত মানসম্পন্ন চিকিৎসার প্রচুর ঘাটতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ইমপেরিয়াল হাসপাতাল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুরোগ বিভাগ স্থাপন করেছে। সেখানে ৪০ জনের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানদের একটি টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রি-মেচিউর (৭০০-১০০০ গ্রাম) নবজাতকদের জন্য ১২টি আলাদা শয্যা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রথম নবজাতকদের জন্য ডেডিকেটেড এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। সেখানে মেডিকেল টিম ডাক্তার, নার্স, ভেন্টিলেটরসহ লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা থাকবে। এই পর্যন্ত ২০০ এর অধিক প্রি-মেচিউর শিশুদের চিকিৎসা, নিউবর্ণ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি রোগ— হ্নদযন্ত্র, হরমোন, হারজোড়া, চোখ, কানের জন্মগত ত্রুটি নির্ণয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ল্যাব মেডিসিন বিভাগ, বিশেষ করে ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে বায়োপসি হিস্টোপ্যাথোলজি বিভাগ অত্যন্ত সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অপারেশন চলাকালীন তাৎক্ষণিক ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ফ্রোজেন সেকশনের ব্যবস্থা রেখেছে। শুধু তাই নয়, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে সর্বাধুনিক ডুয়েল সোর্স সিটি স্ক্যান মেশিনের মাধ্যমে হার্টের সিটি এনজিওগ্রাম ও ক্যালসিয়াম স্কোরিংয়ের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে হ্নদরোগ হওয়ার আশঙ্কার হার নির্ণয় করা যায়।
ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ভবিষ্যৎ তুলে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, এ বছর চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিং শুরু হতে যাচ্ছে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালের মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এই হাসপাতালের মূল লক্ষ হচ্ছে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।
এএন/এসএ