জমিগুলোর মালিক সাধারণ মানুষ। বিএস জরিপও বলছে তা। এলজিইডি কর্তপক্ষের যদি সড়ক নির্মাণ করতে এই জমির প্রয়োজন হয় তাহলে তা অধিগ্রহণ করবে তারা, এটিই রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়ম। কিন্তু এই নিয়মকে বুড়ো আঙুলই দেখালো সরকারের এই উন্নয়ন সংস্থাটি। চট্টগ্রামে জোর দখল করেই মানুষের জমির উপর সড়ক নির্মাণের অভিযোগ উঠলো তাদের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন এলাকার হাজী আব্দুল গণি সওদাগরের খামার বাড়ির বাসিন্দা শামসুল হুদা মিন্টু। বাংলাদেশ জরিপে (বিএস) পৈত্রিক সূত্রে তার মালিকানাধীন প্রায় ২৬ শতাংশ জমি দখলে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। এই জমিতেই তারা নির্মাণ করছে সড়ক!
নিয়ম অনুযায়ী সরকারের যে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নে আগে জরিপ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা থেকে ডাঙ্গারচর পর্যন্ত সোয়া পাঁচ কিলোমিটারের এই সড়কটি সংস্কারের ক্ষেত্রে মানা হয়নি এ নিয়ম।
অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকার আগের ৬ ফুটের দীর্ঘ এ সড়কটি বর্তমানে ১৮ ফুট প্রশস্ত করছে এলজিইডি। সড়কটির পরিধি বাড়ানো হলেও নেওয়া হয়নি জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ। সড়কের ভেতরে জমি ঢুকে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক জমির মালিকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন হাজী আব্দুল গণি সওদাগরের খামার বাড়ির বাসিন্দা শামসুল হুদা মিন্টুর নিজের ও পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি দখল করে রাতারাতি কেটে ফেলা হয়েছে প্রায় ১৫টির অধিক গাছ। শামসুল হুদা মিন্টু ছাড়াও পুরো সড়কটিতে স্থানীয় অনেকের চাষযোগ্য ও ভরাট জমি ঢুকে পড়েছে ১৮ ফুটের ওই সড়কের ভেতর।
জানা যায়, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চুক্তি এ সড়ক সংস্কারে (জেবিতে) কাজ শুরু করে হাসান টেকনো বিল্ডার্স ও এমএএইচ কনস্ট্রাকশন নামের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় চলমান রয়েছে এ সড়ক প্রকল্পের কাজ।
২০২২ সালের ১৭ জুন সড়কটি সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ১৮ ফুটের পাকা অংশ থাকবে ১০ ফুট পর্যন্ত। পুরো সড়কটি নির্মিত হচ্ছে সিসি ও পিস ঢালাই করা হবে। সড়কটির বাজার একটি অংশে শুধুমাত্র ড্রেন নির্মাণ করার কথা বলা হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক শামসুল হুদা মিন্টু বলেন, ‘পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া বিএস দাগের ২২২৫, ২২২৬, ২২২৭, ২২২৮ ও ২২২৪ দাগের প্রায় ২৬ শতাংশ জায়গা এ রাস্তায় ঢুকে পড়েছে। একইসঙ্গে রাস্তাটির মাটি ভরাটের কাজ করছেন যেসব সাব-কন্ট্রাক্টররা তারা আমার অনুমতি না নিয়ে ইচ্ছে মতো আমার বাড়ির পুকুর পাড়ের আশপাশে প্রায় ১৫টির অধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছে। অনুমতি না নিয়ে আমার জমি থেকে মাটি নিয়ে ভরাট করেছে রাস্তার কাজ। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার চাই।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কর্মকর্তা ও চলমান প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছরের আগের রাস্তাটি ছিল মাত্র ৬ ফুটের। এখন সেটি হচ্ছে ১৮ ফুটের রাস্তা। প্রায় সোয়া ৫ কিলোমিটারের এ রাস্তাটির সংস্কার করতে বাড়ানো হয়েছে এটির পরিধি। এ রাস্তা ভেতরে কারো জমি থাকার কথা নয়। যদি কারও জমি পড়ে থাকে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে।’
এমএফও