অভাবের তাড়নায় সদ্যপ্রসূত সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছেন এক হতদরিদ্র মা। বিনিময়ে মিলেছে হাসপাতালের বিল পরিশোধ ও কিছু নগদ টাকা। এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কলেজ বাজার এলাকার সাউথ চট্টগ্রাম হাসপাতালে।
শনিবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় জয়া দাশ (৩৮) একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এর আগে আনোয়ারা উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের জয়া দাশ গর্ভবতী থাকা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে বাবার বাড়িতে চলে যান। এরপর চাকরিও হারান তিনি।
এমন অবস্থায় প্রসব ব্যথা ওঠলে তাকে কর্ণফুলীর সাউথ হাসপাতালে ভর্তি করায় পরিবার।
তবে সন্তানের জন্মের পরপরই চরম অর্থকষ্টের কথা হাসপাতালের নার্সদের জানান জয়া ও তার পরিবার। এ অবস্থায় হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় এক নার্সের মধ্যস্থতায় তার আত্মীয় এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে নবজাতককে দত্তক দেন জয়ার পরিবার।
বিনিময়ে ওই দম্পতি ১২ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করেন এবং জয়ার হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সাদা কাগজে মুচলেকা দিলেও তা কোনো আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নবজাতকের দাদু পরিমল দাশ বলেন, ‘মেয়ের ডিভোর্স হয়েছে, আগের সংসারে একটি সন্তান আছে। আমি কৃষিকাজ করি, সংসারের খরচ চালাতেই হিমশিম খাই। মেয়ে চাকরিও হারিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে নবজাতক নাতিকে দত্তক দিতে হয়েছে। যারা নিয়েছে তাদের পরিচয় জানি না, শুধু জানি হাটহাজারীর লোক। নার্সের মাধ্যমেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।’
অপর এটি সূত্র জানায়, নবজাতকের জন্ম হিন্দু পরিবারে। কিন্তু দত্তক দিয়েছে মুসলিম পরিবারে। পরে আইনি জটিলতাও ঘটতে পারে।
সাউথ হাসপাতালের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এটি দুই পরিবারের সমঝোতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কিছু করার ছিল না।’ তবে নার্স জড়িত কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জেবুননেসা জানান, ‘ঘটনাটি শুনে টিম পাঠিয়েছিলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, আর্থিক সংকটের কারণেই পরিবারের সম্মতিতে নবজাতকটি দেওয়া হয়েছে। তবে এটা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা থানায় জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই। মুসলিমদের ক্ষেত্রে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই, তবে অভিভাবকত্ব নেওয়া যায়। সেটিও নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ায় করতে হয়।’
তিনি জানান, অভিভাবকত্ব নেওয়ার জন্য ১৮৯০ সালের ‘গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট’-এর আওতায় পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হয়। এছাড়া ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্স অনুযায়ীও অভিভাবকত্ব নেওয়া সম্ভব।’
জেজে/ডিজে