গাইড ছাড়াই ফেরত আসেন ২২ জন পর্যটক, ট্যুরহোস্ট বর্ষা গ্রেপ্তার
আলীকদমে দুই পর্যটকের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ১
বান্দরবানের আলীকদমে ভ্রমণ শেষে ফিরে আসার পথে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া এক পর্যটকের এখনও খোঁজ মেলেনি। এর আগে ভেসে যাওয়ার অপর দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পর্যটক ভ্রমণ পরিচালনাকারী পর্যটন সংস্থা ‘ট্যুর এক্সপার্ট’র প্রধান বর্ষা ইসলাম ওরফে বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৩৩ জন পর্যটক নিয়ে গেলেও তিনি নাম-ঠিকানা দেন মাত্র ১২ জনের। এছাড়া ২২ জন পর্যটককে তিনি ফেরত পাঠান গাইড ছাড়া।
শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা পর্যটকদের নিয়ে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড় ভ্রমণ শেষে আলীকদমে ফিরে আসার পর বর্ষাকে আলীকদম থানার পুলিশ আটক করে।
নিহত দুই পর্যটক হলেন—জুবাইরুল ইসলাম ও স্মৃতি আক্তার। নিখোঁজ অপর পর্যটক হলেন হাসান চৌধুরী।
শনিবার (১৪ জুন) আলীকদম থানায় এ ঘটনায় নিহত স্মৃতি আক্তারের বাবা হাবিবুর রহমান একটি মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় বর্ষাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি দেখানো হয়েছে।
বর্ষা ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়মকানুন অনুসরণ না করে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।
তবে ১০ জুন বর্ষা ইসলামের দেওয়া ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘৩৩ জন নিয়ে আমি ও হাসান আছি ক্রিসতংয়ে পথে। হাসান টিম নিয়ে চলে যাবে খেমচং পাড়া, আমি যাবো লিমান লিবলু সামিটের দিকে।’ এখানে হাসান বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন।
গত ৮ জুন ‘ট্যুর এক্সপার্ট’র ব্যবস্থাপনায় দুই দলে ভাগ হয়ে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদমের দুর্গম ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে বেড়াতে যান। সেখান থেকে পর্যটকদের প্রথম দলটি ফিরে আসার পথে সহ তিনজন শামুক তৈরির ঝরনায় পাহাড়ি ঢলে ভেসে নিখোঁজ হন। এদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জুবাইরুল ইসলাম ও শুক্রবার স্মৃতি আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে হাসান চৌধুরী নামে একজন পর্যটক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্ষা ইসলামের পরিচালিত ট্যুর এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের অনলাইনে ক্রিস্টং ও রংরাং পাহাড়ে ভ্রমণের ওপর আকর্ষণীয় পোস্ট করেন। ওই পোস্ট দেখে তার মেয়ে স্মৃতি আক্তার আলীকদম যান। বৈরী আবহাওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি না জানিয়ে বিপজ্জনক জায়গায় পর্যটকদের নিয়ে গিয়ে বর্ষা ইসলাম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাছাড়া স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড পর্যাপ্ত সংখ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাননি তারা। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড ছাড়া পাহাড়ি পরিবেশে তার অনভিজ্ঞ মেয়ে স্মৃতি আক্তারসহ পর্যটকরা আলীকদমের দিকে ফিরছিলেন।
শামুকঝিরি ঝরনা এলাকায় এসে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে স্মৃতি আক্তার ও সঙ্গে থাকা হাসান চৌধুরী এবং জুবাইরুল ইসলাম ভেসে যান। ট্যুর এক্সপার্টের প্রধান বর্ষা ইসলাম ও তার সহযোগীদের অবহেলা, দায়িত্বহীন ও অদক্ষতায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন জানান, বর্ষা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের অন্য ব্যক্তিদেরও অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়েছে। বর্ষাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানান, কোনো পর্যটক উপজেলা সদরের বাইরে ভ্রমণে গেলে উপজেলা পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ট্যুর এক্সপার্টের বর্ষা ইসলাম ১২ জন পর্যটকের নাম ও ঠিকানা দিয়ে ৩৩ পর্যটকের জন্য মাত্র একজন ট্যুরিস্ট গাইড নিয়েছিলেন সঙ্গে। ১২ জন ট্যুরিস্ট একজন গাইড নিয়ে আরও দূরে ভ্রমণে গেছেন।
তিনি জানান, ২২ জন পর্যটককে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়েছে। এজন্য দুর্ঘটনায় পড়ে তিন পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনও একজনের কোনো হদিস মিলছে না।
ডিজে