চট্টগ্রামে মাত্রই গতকাল সোমবার করোনা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়েছিল। এর মাত্র ২৪ ঘন্টায় সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও করোনা এগিয়ে চলেছে ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে। গত ২৪ ঘন্টায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হল রেকর্ড ৯৫৫ জনের শরীরে। গতকালের ৯ মৃত্যুর পর চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেলেন আরও ১০ জন।
রোববার (১১ জুলাই) সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯৫৫ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে চট্টগ্রামে মোট করোনারোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৭৮৪ জনে। শনাক্তের দিক থেকে গত ২৪ ঘন্টায় পাওয়া ৯৫৫ জন করোনারোগী একদিনের আগের সব রেকর্ডই ভেঙে দিয়েছে। সংক্রমণের হার ৩৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর এই একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের— যার ৪ জন চট্টগ্রাম নগরের, আর বাকি ৬ জনই উপজেলার।
সোমবার (১২ জুলাই) মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নগরীর নয়টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাব এবং এন্টিজেন টেস্টে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৬৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নতুন ৯৫৫ জন করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন।
নতুন শনাক্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে রয়েছে রেকর্ডসংখ্যক ৬৩৬ জন এবং উপজেলাগুলোতে ৩১৯ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সীতাকুণ্ডে সর্বোচ্চ ৫০ জন, হাটহাজারীতে ৩৬ জন, রাউজানে ৩৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩০ জন, মিরসরাইয়ে ২৭ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮ জন, বোয়ালখালীতে ২৬ জন, আনোয়ারায় ১৫ জন, পটিয়ায় ২১ জন, সন্দ্বীপে ১৪ জন, চন্দনাইশে ১১ জন, বাঁশখালীতে ৯ জন, এবং সাতকানিয়ায় রয়েছেন ৯ জন।
চট্টগ্রাম জেলায় এখন করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ৬৬ হাজার ৭৮৪ জন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের বাসিন্দা ৫১ হাজার ২৯৭ এবং ১৪ উপজেলার ১৫ হাজার ৪৮৭ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগরে চারজন এবং উপজেলাগুলোতে আরও ছয়জনের মৃত্যু হল। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯০ জনে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের ৫০৪ ও উপজেলার ২৮৬ জন।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে (বিআইটিআইডি) ৬৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম নগরের ১৫৭ ও উপজেলার ৫৩ জন জীবাণুবাহক পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৪০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নগরের ১০৭ ও উপজেলার ২৩ জনের শরীরে জীবাণুর উপস্থিতি চিহ্নিত হয়। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২২৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম নগরের ৪৭ ও উপজেলার ৩৫ জন জীবাণুবাহক পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলে নগরের ৫১ ও উপজেলার ১৮ জনের শরীরে জীবাণুর উপস্থিতি চিহ্নিত হয়।
নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএল-এ পরীক্ষা করা ৪২টি নমুনায় নগরের ২১ ও উপজেলার চারটি নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। নমুনা সংগ্রহের পরপরই ফলাফল প্রদানকারী এন্টিজেন টেস্টে ৬৫৪ জনের মধ্যে ২৩৬ জন জীবাণুবাহক বলে জানানো হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ৭১ জন ও উপজেলার ১৬৫ জন। চট্টগ্রাম নগরীতে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহকারী কয়েকটি কেন্দ্রে এন্টিজেন টেস্ট করা হয়ে থাকে।
এদিকে বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতালে ৫২টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ২৮ ও উপজেলার ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। অন্যদিকে শেভরন ল্যাবে ১৯৭টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ৩৬ ও উপজেলার ৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। বেসরকারি ইপিক হেলথ কেয়ারে ১০২টি নমুনার মধ্যে উপজেলার ৫টিসহ ৫৫টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ১৫১টি নমুনায় চট্টগ্রাম নগরের ৬৩ ও উপজেলার ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
এদিন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে কেবল একটি এবং সেটির ফলাফল ছিল নেগেটিভ।
সিপি