চট্টগ্রামে কর্মচারীর বদলি নিয়ে স্বাস্থ্য কর্তার নাটক, ‘বিব্রত’ সিভিল সার্জন

তদন্ত রিপোর্টের পরও 'ক্ষমতার' জোরে বহাল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হিসাবরক্ষক রাজিব মজুমদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চলছে কচ্ছপ গতিতে। এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বদলির আদেশ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে তার পদায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

এছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যসাচী নাথের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রাজিব মজুমদারকে বদলি করা হয় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তাকে ‘প্রধান সহকারী’ করতে সিভিল সার্জনকে সুপারিশ করেন সব্যসাচী নাথ। কিন্তু তার বিষয়ে গত ৯ আগস্ট পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ নানা দপ্তরে একটি চিঠি দেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াছ চৌধুরী।

আরও জানা গেছে, সিভিল সার্জনের কাছে রাজিব মজুমদারের জন্য সুপারিশ করেন সব্যসাচী নাথ। কিন্তু এর আগে রাজিবের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা এনে তাকে বদলির জন্যও সুপারিশ করেন সব্যসাচী। আর এজন্য সিভিল সার্জন রাজিবের সকল অনিয়ম উল্লেখ করে সুপারিশের বিষয়টি ‘বিব্রতকর’ বলে একটি চিঠি পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেন।

এমনকি রাজিব মজুমদারের নানা অসদাচরণের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) দপ্তর থেকেও সিভিল সার্জনকে অনুরোধ জানানো হয়।

রাজিবের বিরুদ্ধে টেন্ডার কার্যক্রমে অনিয়ম করায় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করে। তবে এই ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করা হলেও এখনও মেলেনি তদন্ত প্রতিবেদন।

Yakub Group

এদিকে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল সব্যসাচীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন পটিয়া পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল। এতে তিনি উল্লেখ করেন, দুই লাখ বাসিন্দার পটিয়া পৌরসভায় একটি কেন্দ্রেই কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই কেন্দ্র বৃদ্ধির কথা জানালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তা কর্ণপাত করেননি। পরে উচ্চ মহলের সঙ্গে আলাপ করে পৌরসভায় নয়টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্ট রুল না মেনে পৌরসভার সম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন সব্যসাচী। এছাড়া কোভিড-১৯ টিকার দায়িত্ব পালনকারী স্বেচ্ছাসেবী, গ্রাম পুলিশ, আনসারদের জন্য আসা সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, করোনার ঝুঁকিতে থাকা বাবুলের পরিবারের সদস্যদের টিকা দিতে বললে বিভিন্ন অজুহাতে বাবুল ও তার পরিবারকে করোনার টিকা দেননি সব্যসাচী। পরে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি টিকা নিয়েছেন। এছাড়া বাবুলের একমাত্র ছেলে আতিক শাহরিয়ার মাহির ১৮ বছর পূর্ণ হলেও বারবার অনুরোধের পরও ছেলের টিকার ব্যবস্থা করেননি সব্যসাচী। পরিশেষে বাবুলের একমাত্র ছেলে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে ডা. সেখ ফজলে রাব্বিকে সভাপতি, নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) স্বাস্থ্য এর দপ্তরকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গত এক মাস আগেই জমা দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

এই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্বে গঠিত কমিটির সদস্যরা ডাক্তার হওয়ায় ও তাদের নিজস্ব ডিউটি থাকায় তদন্তের কাজ কিছুটা দেরী হচ্ছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন পেলে স্বাস্থ্য বিভাগকে এই বিষয়ে জানানো হবে। কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

এর আগে ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর সব্যসাচী নাথের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সত্যতা মিললেও তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অদৃশ্য খুঁটির জোরে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

আরএস/ডিজি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!