চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বাড়লেও সরকারি হাসপাতালে টেস্ট কিট না থাকায় রোগীরা ছুটছেন বেসরকারি ল্যাবে। সেখানে একেক জায়গায় একেক দাম—৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি পর্যন্ত। সরকারি নির্ধারিত ফি না থাকায় কেউ টেস্ট করাচ্ছেন কষ্টে, কেউ আবার ফিরছেন হতাশ হয়ে। কিট সংকট ও ‘ফি কারচুপি’ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, অথচ সংক্রমণ ছড়াচ্ছে শহরজুড়ে।
বেসরকারি ল্যাবের ফি ভিন্নতা
চট্টগ্রামে বিভিন্ন বেসরকারি ল্যাবে চিকুনগুনিয়া আরটি-পিসিআর টেস্টের ফি ৪,০০০ থেকে ৫,১০০ টাকা পর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ: চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল: ৪,০০০ টাকা, এপিক হেলথ কেয়ার: ৫,১০০ টাকা, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার: ৫,০০০ টাকা, কক্সবাজারের বেসরকারি ল্যাবেও ফি ১,৯০০ থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত। করোনার আরটি-পিসিআর টেস্টের সরকারি নির্ধারিত ফি ২,০০০ টাকা, যা চিকুনগুনিয়ার তুলনায় পাঁচগুণ কম।
সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি-তে পিসিআর ল্যাব থাকা সত্ত্বেও কিটের অভাবে সরকারি পর্যায়ে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে র্যাপিড টেস্ট কিট সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা যা বলছেন
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, ‘চিকুনগুনিয়ার জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি নেই। তবে ডেঙ্গুর মতো একই মূল্য নেওয়া যেতে পারে। কেউ অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ডেঙ্গুর তুলনায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। রোগ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর উদ্যোগ দরকার।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘সরকারি ভাবে চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্ধারিত ফি নেই। দ্রুত মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ আশা করছি।’
পরিসংখ্যান ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
৩০ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৮৪, সর্বশেষ শনাক্ত ১০৯ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ৮৬৫ জন। আইইডিসিআর চট্টগ্রামের ছয়টি এলাকায় জরিপে ১২৮টি বাড়ির ৬২টিতে লার্ভা পাওয়া গেছে (৪৮.৪৩% হারে)। লার্ভার ঘনত্ব ৭৫.২৯% এবং ব্রুটো ইনডেক্স সর্বোচ্চ ১৩৪% (আগ্রাবাদ)।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
বিআইটিআইডি’র অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর প্রায় ৫০% চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। জ্বর চলে গেলেও জয়েন্ট ব্যথা ও ফোলা ২-৩ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। অন্য কোনো রোগ থাকলে প্রভাব পড়তে পারে।’
চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন, জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জেজে