চট্টগ্রামে জমেনি শীতকাপড়ের বাজার, লোকসানের ভয় ব্যবসায়ীদের
শীতের প্রকোপ নেই, নতুন কাপড় তুলছেন না ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রামে এখনও জমেনি শীতের পোশাক বিক্রির বাজার। শুরুর দিকে শীতের তীব্রতা কিছুটা দেখা গেলেও চলতি মাসের শেষভাগে এসে তা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতের কাপড় কেনাবেচার দোকানগুলোতে দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। এতে ব্যবসায়ীরা হতাশায় দিন পার করছেন।
তবে শীতের মাত্রা না বাড়ায় দোকানে শীতের কাপড় সরবরাহ কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—এ তিন মাস দেশে শীতের প্রকোপ দেখা যায়। তবে এ বছর নভেম্বরের শেষ ভাগ থেকে কিছুটা শীতের তীব্রতা দেখা গেলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে তা অনেকটাই কমে গেছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামে কোনো দিন শীতের তীব্রতা বেড়েছে, আবার কোনো দিন কমে গেছে। আবহাওয়ার এমন আচরণ প্রভাব ফেলেছে শীতের কাপড় ব্যবসায়।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর বড় কাপড় বিক্রির মার্কেট জহুর হকার্স মার্কেটে সরেজমিন দেখা গেছে, দোকানিরা বিভিন্ন ধরনের শীতের কাপড় তুলেছেন। হুডি, জ্যাকেটের পাশাপাশি কম্বলও রয়েছে। কিছু কিছু দোকানে অনেকে কাপড় দেখছেন, অনেকে দরদাম করছেন। আবার অনেক দোকানি অলস সময় পার করছেন।
তবে আভিজাত শপিংমলগুলোর তুলনায় এখানে ক্রেতা সমাগম বেশি। এখানেও বিক্রির হার গত বছরের তুলনায় অনেক কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
জহুর হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী জামাল আমিল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মালামাল নিয়ে বসে আছি। বেচাবিক্রি তেমন নেই। ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে বিক্রির হার কিছুটা বাড়লেও এখন আবার ভাটা পড়েছে। জানুয়ারিতে যদি শীতের মাত্রা না বাড়ে, তাহলে লাভ তো দূরের কথা পুঁজি তুলে আনতেই হিমশিম খেতে হবে।
হকার্স মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মো. রানা জানান, গতবারের চেয়ে এবার শীতের কাপড় বিক্রি অনেক কম। প্রতিদিন কিছু কিছু লোকজন আসেন, তবে তারা ছেলেমেয়েদের জন্যেই কিনেন। ক্রেতার আনাগোনা কম হওয়ায় শীতের কাপড়ও কম তুলছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। অথচ গতবছর এমন দিনে কয়েক ধাপে বাহারি ডিজাইনের শীতের কাপড় বিক্রি করেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, হুডি, জ্যাকেট, ব্লেজার, গ্লাভস, টুপিসহ বিভিন্ন শীতের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দোকানিরা। তবে দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার। ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে হতাশার ছাপ।
ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের তীব্রতা না বাড়ায় এখনও বাড়েনি শীতের কাপড়ের চাহিদা। এতে বাজারে চলছে মন্দা। শীতের প্রকোপ না বাড়লে এবার বিপাকে পড়তে পারেন শীতের কাপড় উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, নভেম্বর মাস থেকেই শীতের বাজার জমে ওঠার কথা। অথচ ডিসেম্বরের শেষদিকে এসেও তেমন কোনো ক্রেতা সমাগম নেই। তাই ব্যবসায়ীদের অনেকেই দোকানে নতুন নতুন ডিজাইনের শীতের পোশাক তুলতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ শীত শেষে অবিক্রিত পোশাক সারাবছর আর বিক্রি হয় না। ফলে একটা বড় পুঁজি আটকে থাকে।
মঞ্জুরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘শীতের প্রকোপ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না বাড়ায় দোকানে শীতের পোষাকের সরবরাহে তেমন নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে না। অনেক দোকানি শীতের নতুন নতুন ডিজাইনের পোষাক তুলতে ভয় পাচ্ছেন, যদি বিক্রি না হয়। তাই আমরা ক্রেতারাও দোকানে এসে শীতের পোষাকের বৈচিত্র্যতা দেখতে পাচ্ছি না। কয়েকটা দোকান ঘুরে পুরনো ডিজাইনের একটা জ্যাকেট কিনলাম। দাম তেমন বেশি মনে হয়নি।’
নগরীর আফমি প্লাজা, বালি আর্কেড, নিউ মার্কেট, সানমার ওশান সিটিসহ আভিজাত শপিংমলগুলোতেও দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়।
স্যানমার ওশান সিটির বিক্রেতা হাসান হোসেন বলেন, ‘কাস্টমার নেই বললেই চলে। গত বছরের তুলনায় এবছর শীতের পোশাকের দামও তুলনামূলক কম। তবু গতবারের তুলনায় এবার শীতে পোষাক বিক্রির হার অনেক কম।’
রাকিব বস্ত্রবিতানের কর্মচারী সোহেল রানা বলেন, আমাদের অনেক কালেকশন আছে। কিন্তু শীতই তো নাই। শীত না থাকলে কাস্টমার কিনে কি করবে? আর শীতের বাকি আছে এক মাস। জানুয়ারিতে যদি শীত না বাড়ে তাহলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
তিনি বলেন, শীতের উপকরণের মধ্যে তুলনামূলকভাবে হুডি বেশি বিক্রি হচ্ছে। একেকটা হুডি এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ডিজে