চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বাসিন্দা গৃহিণী শামসাদ মোস্তফা বিউটি বললেন, ‘আমাদের বাসায় দুটো টেলিভিশন। এর একটি সারা বছর বন্ধই থাকে। কেউ দেখে না। আরেকটি টিভি দেখে মূলত কাজের মেয়েটা। এখন ভাবছি, সেই টিভিতে ইন্টারনেট কানেকশন লাগিয়ে তাকে ইউটিউবই দেখতে দেবো। সেট টপ বক্স, মাসে মাসে বাড়তি ভাড়া গোণার ঝামেলায় আর যাবো না।’
এভাবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখার জন্য ডিজিটাল সেট টপ বক্স বসানো নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে খুব কমই সাড়া পাচ্ছেন চট্টগ্রামের অপারেটররা। সরকারের সতর্কবাণীর পরও গ্রাহকদের বেশিরভাগই এ নিয়ে বিরক্ত। তাদের অনেকে চার-পাঁচ হাজার টাকায় ডিজিটাল সেট টপ বক্স কিনে আবার মাসে মাসে টাকা গোণার বদলে প্রয়োজনে কানেকশনই বন্ধ করে দেবেন— এমন সিদ্ধান্তও তৈরি রাখছেন। এমন অবস্থা আঁচ করতে পেরে স্থানীয় ক্যাবল অপারেটরদের অনেকেই গ্রাহক হারানোর আশঙ্কা করছেন।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশের বেসরকারি টিভি মালিকদের সংগঠন ছাড়াও কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সেট টপ বক্স বসানোর জন্য নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নতুন এই সময়সীমা অনুসারে ৩১ মার্চের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সব গ্রাহকের কাছে ডিজিটাল সেট টপ বক্স পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্ধারিত এই সময়ে যারা ডিজিটাল সেট টপ বক্স নেবেন না তারা অনেকগুলো টিভি চ্যানেল দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এর পরের ধাপে ৩১ মের মধ্যে সমস্ত বিভাগীয় এবং মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুরো প্রক্রিয়ায় কেবল অপারেটরবৃন্দ সুলভ মূল্যে গ্রাহকদের এই বক্স সরবরাহ করবে।
জানা গেছে, গ্রাহক চাইলেই নিজেদের পছন্দমতো সেট টপ বক্স কিনতে পারবেন না। এই বক্স কিনতে হবে কেবল অপারেটরদের কাছ থেকেই। গ্রাহকের কাছে যে সেট টপ বক্সটি থাকবে, তাতে একটি কোড নম্বর থাকবে। অপারেটর প্রান্তে একটি সার্ভার থাকবে, সেখানে এই কোড নম্বরটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দুই কোড না মিললে সেট টপ বক্স সচল হবে না।
জানা গেছে, বিভিন্ন চ্যানেল দেখতে হলে গ্রাহককে ডিজিটাল সেট টপ বক্স কিনে সেটার গ্রাহক হতে হবে। গ্রাহকদের সেট টপ বক্স দেওয়ার ব্যবস্থা করবে ক্যাবল অপারেটররা। কিস্তিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা সেট টপ বক্সের দাম আদায় করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও ক্যাবল অপারেটরদের পক্ষ থেকে সেট টপ বক্সের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হলেও তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এই মূল্য আরও কমতে পারে।
কিন্তু চট্টগ্রামের এলাকায় এলাকায় ডিশ ক্যাবলের ব্যবসা রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে মূল ক্যাবল অপারেটররা দাম নিয়ে যা-ই বলুক প্রভাবশালী স্থানীয় অপারেটররা তাদের ইচ্ছেমতো দামেই সেট টপ বক্স গ্রাহকদের নিতে বাধ্য করতে পারেন— এমন আশঙ্কাও রয়েছে। কারণ স্থানীয়ভাবে আগে থেকেই ডিশ সংযোগে জোর করে সংযোগ ফি ও বিল বেশি নেওয়া হচ্ছে অনেক আগে থেকেই।
সরকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে ডিটিএইচ লাইসেন্স দিয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে সচল আছে বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন ‘আকাশ’। সেট টপ বক্সসহ প্রতিষ্ঠানটির ডিটিএইচ সেবার সর্বনিম্ন প্যাকেজের মূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজের মাসিক বিল প্রায় ৫০০ টাকা। অন্যদিকে ডিটিএইচ লাইসেন্স পাওয়া অপর প্রতিষ্ঠানটি সরকারি মালিকানাধীন বিটিভি। তবে তারা এখনও ডিটিএইচ কার্যক্রম শুরু করেনি।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, ‘ইদানিংকালে চীন থেকে সেটআপ বক্স এনে অন্যদের ডিস লাগিয়ে সেখান থেকে ডিটিএইচ সেবা নিচ্ছে, এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা এনফোর্সমেন্ট করব। এগুলোর কিন্তু কঠিন শাস্তি হবে।’
সিপি