চট্টগ্রামে হানাহানির ৪ মামলায় সাড়ে ৭ হাজার ‘বেনামা’ আসামি, নাম শুধু একজনের

এক রাতেই ৮৮ জনকে ধরেছে পুলিশ

চট্টগ্রামে তিনজনকে হত্যা ও অন্তত ৮০ জন আহত হওয়ার পর দুই থানায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা এসব মামলায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজারজনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র একজনের। আর বাকি সবাই ‘অজ্ঞাতনামা’।

এর মধ্যে পুলিশ বাদি দুটি মামলা করেছে। অপর দুটি মামলার বাদি এক ছাত্রলীগ কর্মীর মা ও এমইএস কলেজের ছাত্র। তবে পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা আরও মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গল (১৬ জুলাই) ও বুধবার (১৭ জুলাই) দায়ের করা চার মামলার তিনটিই হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায়। এর মধ্যে দুটি মামলার বাদি পাঁচলাইশ থানার এসআই দীপক দেওয়ান। আর বাকি একটি মামলায় সংঘর্ষে আহত একজনের মাকে বাদি করা হয়েছে। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধরের মা সুমি ধর। এই তিন মামলায় আসামির সকলেই ‘অজ্ঞাত’, সেখানে সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ নেই।

এর মধ্যে হত্যা, দাঙ্গা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ‘অজ্ঞাত’ সাড়ে ৬ হাজার জনকে। বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় ‘অজ্ঞাত’ ১৫০ জনকে এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমন ধরের মা সুমি ধরের মামলায় আসামি করা হয়েছে ‘অজ্ঞাত’ ১৫০ জনকে।

অন্যদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় খুলশী থানায় দায়ের করা এক মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে ৫০০ জনকে। ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র শাহেদ আলীর দায়ের করা সেই মামলায় মাত্র একজনের নাম উল্লেখ করা হলেও বাকি সব আসামিই ‘অজ্ঞাত’ উল্লেখ করা হয়েছে। যে একজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম রমিজ। তাকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে খুলশীর পুলিশ।

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রংপুরে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম ও ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েকশত মানুষ আহত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা তিনটার পর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর-মুরাদপুর এলাকায় গুলি ছুঁড়ে তিনজনকে হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে মুরাদপুর ফরেস্ট গেট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ চলে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টানা সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি চালাতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলও ছুঁড়ে মারা হয়। অন্যদিকে পুলিশও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাদাঁনে গ্যাসের সেল ছুঁড়েছে।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামে নিহত তিনজন হলেন— কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ওয়াসিম আকরাম, নোয়াখালীর বাসিন্দা ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ ফারুক এবং এমইএস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত। এর মধ্যে দুজনের প্রাণ গেছে গুলিতে, অপর একজন প্রাণ হারিয়েছেন ছুরিকাঘাতে।

ময়নাতদন্ত শেষে চট্টগ্রামে নিহত তিনজনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!