চট্টগ্রামে ১৪ উপজেলায় প্রসূতিসেবার বেহাল দশা, ২ বছরে ২৬০০ নারীর প্রসবে মৃত সন্তান
১১ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জরুরি প্রসূতিসেবার জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি থাকলেও নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে সেবা পাচ্ছেন না গ্রামের প্রসুতিরা। চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার ১১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরই একই চিত্র। আবার অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সিজারিয়ান অপারেশনের সুযোগ না থাকায় রোগিকে চট্টগ্রাম মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার আগেই প্রসূতি মা কিংবা বাচ্চা মারা যাচ্ছেন।
জানা গেছে, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও রক্তদানের ব্যবস্থা না থাকা, এক্সরে যন্ত্র নষ্ট থাকা, চিকিৎসকদের অনিয়মিত উপস্থিতি ও এনেসথেসিওলোজিস্ট এর অভাবে ভুগছে ১১ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। ফলে জরুরি প্রসূতিসেবা না পেয়ে মায়েদের ঝুঁকি নিয়ে শহরে আসতে হয়।
অনেক ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে কখনো কখনো প্রসূতি ও বাচ্চা দুজনের জীবনই সংকটের মধ্যে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে এসব সমস্যা চললেও সমাধানে চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নিতে কখনোই দেখা যায়নি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৫৭০ জন প্রসুতি ভর্তি হন। এর মধ্যে সিজারিয়ানের অভাবে জরুরি প্রসূতিসেবা না মেলায় ২ হাজার ৬০০ জন নারী মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার প্রতিটি হাসপাতালে একটি করে প্রসুতি ও এনেসথেসিওলোজিস্ট পরামর্শকের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সন্দ্বীপ, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি পদই শূন্য। শুধুমাত্র ফটিকছড়ি, পটিয়া, মিরসরাই ও সীতাকুণ্ডে এনেসথেসিওলোজিস্ট ও প্রসূতি পরামর্শক দুইজনই আছেন।
আনোয়ারা, চন্দনাইশসহ ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতিদের অস্ত্রোপচারের জন্য ঝকঝকে অস্ত্রোপচার কক্ষে শয্যা, বাতি, যন্ত্রপাতি সবই রয়েছে। কিন্তু এনেসথেসিওলোজিস্ট না থাকায় সে যন্ত্রগুলো কাজে লাগছে না।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনেসথেসিওলোজিস্ট ও প্রসূতি কনসালটেনন্টের পদ শূন্য থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে প্রেষণে আসা কনসালটেন্টের সংখ্যা ২২ জন। একই সাথে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে প্রেষণে থাকা এনেসথেসিওলোজিস্ট এর সংখ্যা ১৬ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘জরুরি প্রসূতিসেবার বিষয়টি সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচেনায় রাখলেও গাইনি ও এনেসথেসিয়ার জুনিয়র কনসালট্যান্টের অভাবে ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ কার্যক্রম সঠিকভাবে চালু করা যাচ্ছে না।’ কোর্সের নামে ডাক্তাররা শহরে থাকায় এ সমস্যা আরো তীব্রতর হচ্ছে বলে তিনি জানান।
কেএস