চট্টগ্রাম ওয়াসায় আন্দোলনরত অস্থায়ী কর্মচারীদের ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ দিলেন সচিব। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল এবং বকেয়া মজুরির দাবিতে এতদিন অফিসের ফ্লোরে ফ্লোরে মাইক বেঁধে ও মূল গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন তারা। তাদের এসব বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
তবে আন্দোলনরত কর্মচারীদের দাবি, আমাদের অস্থায়ী নিয়োগ হলেও আমরা যোগ্যতার ভিত্তিতে আমাদের মধ্য থেকে স্থায়ী করা হোক।
১৮ ডিসেম্বর (রোববার) আন্দোলনরত কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ওয়াসা। সচিব শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞাপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন সমাবেশ, আন্দোলন করা থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইদানিং চট্টগ্রাম ওয়াসায় দৈনিক ভিত্তিতে ও আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত অস্থায়ী লোকবল অফিস সময়ে মিছিল-মিটিং করার ফলে, অফিসে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। যা অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার সামিল। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার আদেশ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও অফিস সময়ে মিটিং মিছিল ও জমায়েতের আয়োজন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এর ফলে সংস্থার সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসার সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে কোনো ধরনের মিটিং-মিছিল ও জমায়েত এবং ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন না করার জন্য শেষবারের মত নির্দেশ দেওয়া হলো। অনাথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই বিজ্ঞপ্তির পর থেকে অস্থায়ী ও আউটসোর্সিং কর্মচারীদের আন্দোলনের গতি কিছুটা কমে এসেছে। এর আগে ১১ ডিসেম্বর কাফনের কাপড় পরে চট্টগ্রাম ওয়াসার সামনে বিক্ষোভ করেছেন দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীরা। ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ওয়াসা ভবনের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে তারা টানা ১০ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। তাদের দাবি পূরণ না হলে পানি সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেন। পরে ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আক্তারের আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, উচ্চ আদালতে মামলা থাকার পরও ওয়াসায় দৈনিক ভিত্তিতে কর্মরতদের স্থায়ী না করে উল্টো নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ করার পরও তাদের স্থায়ী না করে নতুন করে জনবল নিয়োগের উদ্যোগ পরিকল্পিত।
বিক্ষোভকারীরা অনতিবিলম্বে স্থায়ী নিয়োগের দাবি জানান।
তারা আরও জানান, ওয়াসার ক্রান্তিকালে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বৈধতা দেওয়ার পরে অন্যদের নিয়োগ দিতে হবে। মামলা চলমান থাকার পরও কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে বিজ্ঞপ্তি ছাড়ে। হাইকোর্টকে অমান্য করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিবাদে আমরা এখানে মিলিত হয়েছি। বিগত বছরগুলোতেও আমরা বৈষম্যের শিকার ছিলাম এখনও বৈষম্যের শিকার।
জানা গেছে, ওয়াসায় ২০৮ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী রয়েছে। তারা বিভিন্ন পাম্পে অপারেট, ইলেক্ট্রিশিয়ান, নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন পদে কাজ করছেন। এছাড়া আউটসোর্সিং হিসেবে কর্মরত আছেন ৩০ থেকে ৩৫ জন। চলতি বছরে প্রতি মাসেই দুই থেকে তিনবার নির্ধারিত কাজ বাদ দিয়ে ওয়াসার ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে মাইক লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সিবিএ সভাপতি নূরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আসলে এ আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা কম। এটা আউটসোর্সিং কর্মচারীদের। তবে গতদিন তারা যে আন্দোলনটা করেছে, সেটি পুরোটা সুশৃঙ্খল হয়নি। শেষের দিকে একটু বাড়াবাড়ি হয়েছে।
বাংলাদেশ দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী সমিতির আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ১০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের চাকরি স্থায়ী না করে, বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে, নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আগে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। এখন আন্দোলন করতেও ভয় পাচ্ছি। ওয়াসার নির্বাহী লেভেলের কর্মকর্তারা আমাদের টার্মিনেট করার হুমকি দিয়েছেন।
আইএমই/ডিজে


