২০২১ সালের নিয়োগ বাতিল, প্রমোশন কোটা বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে সড়ক অবরোধের পাশপাশি ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। ‘বাংলা ব্লকেড’র এ কর্মসূচিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও শ্যামলী, এমআইটিসহ বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গাড়ি চালকের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি। এ সময় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনে তারা অবস্থান নেওয়ায় কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-টিএসসিসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এদিন সন্ধ্যায় ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’র ব্যানারে দেশজুড়ে চলা এ আন্দোলনের প্রতিনিধি জুবায়ের পাটোয়ারী তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড়ে দেশজুড়ে বৃহস্পতিবার রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেন।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এর আগেও আমরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। তারপরও দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই রাস্তায় নামতে আমরা বাধ্য হয়েছি।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে গত ২০ মার্চ একই দাবিতে বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আড়াই ঘণ্টা সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করেছিলেন।
আইএমই/ডিজে