চট্টগ্রামের পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজার থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে এক যুবককে রাম-দা, কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। পরে তাকে পাশের জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধার করেছে।
আহত যুবকের নাম গাজী আজগর আলীকে (৪০) ।গাজী আজগর আলী বুধপুরা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আবুল কাশেমের ছেলে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ৮টার দিকে উপজেলার বুধপুরা বাজার হতে স্থানীয় যুবক সিএনজিতে তুলে নিয়ে যায় সশস্ত্র ১০-১৫ জনের দল। বুধপুরা বাজার থেকে তুলে নিয়ে সাইঁদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। এসময় রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বুধবার বিকেলে অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসকের জানান, আহত যুবক আজগরের দুই হাতে অপারেশন লাগবে। আমরা প্রথমে তার রক্তক্ষরণের ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করেছি। আগামীকাল শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে আহত যুবক গাজী আজগর আলীর বড়ভাই কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা বাজারের বক্করের দোকান হতে আমার ছোট ভাই গাজী মো. আজগর আলীকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাসেমের পালিত চিহ্নিত সন্ত্রাসী হামিদ, সোহেল, খোকন, ট্যাটু সোহেল, রমিজ, মিজান, ফাহিম, অভিসহ ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল আজগরকে বুধপুরা বাজার থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে। এসময় তাকে সিএনজি অটোরিকশা করে সাইদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দেয়, কিরিচ, রাম-দা দিয়ে হাতে-পায়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এর আগে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী আহমদ বাদি হয়ে গত ২০ আগস্ট ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিস্ফোরক আইনে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৯ আগস্ট রাতে পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মো. নুরুল হাসান বাদি হয়ে সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি, ৭৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে হয় মামলা করেন। এসব মামলায় কাশিয়াইশ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে আটক দেখিয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ২০ আগস্ট আদালতে পাঠানো হলে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই দিন রাতে কাশিয়াইশ ইউনিয়নের বুধপুরা এলাকার নুর আয়শা বাদি হয়ে পটিয়া থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন কাশেম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
মামলায় কাশেম চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় প্রায় তিনমাস কারাগারে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে এসে কাসেম চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। এলাকায় জবর দখল, চাঁদাবাজি, গ্রামের মানুষজনকে তার লোকজন দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছেন।
স্থানীয় সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবক কাসেম চেয়ারম্যানের চাঁদাবাজি মামলায় জেল থেকে জামিনে বের হয়ে বলেন, আমি বাদি হয়ে কাসেম চেয়ারম্যানকে আসামি করে পটিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। তার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করান। এরপর আমি জেলে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন কাসেম চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী, তার ভাই হাসেম মেম্বারসহ বিভিন্ন জন আমার সঙ্গে দেখা করে আমাকে চাপ প্রয়োগ করতেন, যেন আমি তার বিরুদ্ধে করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিই। আমি কোনোভাবেই তার কূটকৌশলের কাছে হার মানিনি। আমি যখন জামিনে বের হয়ে আসি, তখন আমাকে কাসেম চেয়ারম্যান বলতে থাকেন—যতদিন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তুলে না নিবি, ততদিন পর্যন্ত এলাকার কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না। সেই জের ধরে আজগর আলীর ওপর পরিকল্পিতভাবে তার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, বুধপুরা এলাকার ঘটনায় আহত যুবকের পক্ষ হতে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিজে