‘বেয়াদব কোথাকার, বসো’—মেয়র শাহাদাতের মন্তব্যে জুলাইযোদ্ধারা হতবাক
অনুষ্ঠানে উত্তেজনা, ক্ষুব্ধ শহীদ পরিবার
চট্টগ্রামে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ স্মৃতি সম্মাননা ও আহত সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশে একাধিকবার ‘বেয়াদব’ বলায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ঘিরে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

রোববার (১১ মে) চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে ‘সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠান চলাকালীন কিছু অংশগ্রহণকারীর অসন্তোষ প্রকাশ ও হট্টগোলের প্রেক্ষিতে মেয়র শাহাদাত হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এর জেরে অনুষ্ঠানস্থলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
‘বেয়াদব কোথাকার…’ বলে ভাইরাল মেয়র
অনুষ্ঠানের সময় রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘বেয়াদব কোথাকার, বসো। বেয়াদবি করতে আসছো এখানে, কথা বললে শোন না… বারবার বলতেছি, তোমরা কথা শোন না কেন?’ এই বক্তব্যের সময় দর্শকসারিতে থাকা একজন আহত ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে মঞ্চে শুইয়ে দেওয়া হয়। এ সময় মেয়র বলেন, ‘একে মারছে কে? ধরে নিয়ে আস।’ এই বক্তব্যটিও ভিডিওতে স্পষ্ট শোনা যায়।
শহীদ পরিবারের ক্ষোভ
এ ধরনের বক্তব্য ও আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্বজনরা। এক শহীদ পরিবার সদস্য বলেন, “এটা তো একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, এখানে এভাবে বকাঝকা করার অধিকার কারো নেই। মেয়রের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা এমন ব্যবহার আশা করিনি।’
আরেকজন আহত যোদ্ধার ছেলে বলেন, ‘আমার বাবাকে যে লড়াইয়ের জন্য আজকের এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে, সেই বাবার সামনে মেয়র যেভাবে কথা বলেছেন, তা শুধু অপমানজনকই নয়, হৃদয়বিদারকও।’
মেয়রের ব্যাখ্যা
ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ভিডিওটা খণ্ডিতভাবে ছড়ানো হয়েছে। পুরো প্রেক্ষাপট না জেনে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এটা হলুদ সাংবাদিকতার উদাহরণ।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘যারা ঘটনাস্থলে ছিল, তারা জানে অনুষ্ঠানটা বেশ চমৎকারভাবে হয়েছে। কিছু মানুষ নাম বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খলা করছিল। আয়োজকদের অনুরোধে আমি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
অনুষ্ঠানস্থলে আহত ব্যক্তি সম্পর্কে মেয়র বলেন, ‘তিনি একজন শহীদ পরিবারের সদস্য। শারীরিক দুর্বলতার কারণে অজ্ঞান হয়ে যান। আমি নিজে তার অবস্থার খোঁজ নিয়ে পুলিশ গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।’
আয়োজনে ছিলেন বিশিষ্টজনেরা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ স্মৃতি সম্মাননা ও আহত সংবর্ধনা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্বাস উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নসরুল কদির, কমিটির সদস্যসচিব ডা. শাকিল আরিফ চৌধুরী, সদস্য ডা. শামিম হায়দার তালুকদার, সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি ও মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জুলাই আন্দোলনের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
‘অপেশাদার ও অপ্রত্যাশিত’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক নেটিজেন মেয়রের বক্তব্যকে ‘অপেশাদার ও অপ্রত্যাশিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে জনগণ শালীনতা ও সহনশীলতা আশা করে।’
অন্যদিকে মেয়রের অনুসারীরা বলছেন, ‘ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
সিপি