সাধারণত দেখা যায়, নির্বাচনে জেতার কৌশল হিসেবে অনেকেই নিজহাতে জনসেবা করছেন এরকম ছবি প্রচার-প্রসার করেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পরও যখন সেই নেতা জননেতা হিসেবে নিজহাতে জনসেবা করেন তখন তার ঘোর বিরোধীরাও এসব ‘লোক দেখানো’ তকমা দিতে পারেন না।
বলছি, এরকমই এক জনপ্রতিনিধি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান চৌধুরীর কথা। সরকারি সহায়তার জন্য বসে না থেকে নিজে তহবিল সংগ্রহ করে দেদারসে রাত-দিন ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছেন ছালেকুজ্জামান। কোথাও নৌকায়, কোথাও কোমড় পানি ডিঙিয়ে ত্রাণের বস্তা কাঁধে বরইতলীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি।
ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়ার যে অঞ্চলটি সবচেয়ে বেশি পানিতে তলিয়ে গেছে সেটি হচ্ছে বরইতলী। গত চারদিন ধরে এখনো পানিবন্দি এখানকার হাজারো মানুষ, শতশত ঘরবাড়ি। এমনকি, চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামানের বাড়িতেও বানের পানি। বন্যায় মাছের ঘেরেরও ক্ষতি হয়েছে তার। তবুও থামেননি তিনি।
শুধু বন্যা নয়, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবার আগে ছুটে আসেন এই চেয়ারম্যান। করোনা মহামারীর সময় ভয়বীতি উপেক্ষা করে তিনি প্রতিদিন চষে বেড়িয়েছিলেন এক এলাকা থেকে আরেক এলাকা। সহায়তার সময় দেখেননি দল,ধর্ম, জাত, গোষ্ঠী । সেটির ফলও পেয়েছেন তিনি, সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার জনসাধারণের নিরঙ্কুশ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
এলাকা কিংবা এলাকার বাইরের অনেকেই মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামানের এসব কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার সিনিয়র সহসম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার তার ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখেন, “সাদা গেঞ্জি পরা মানুষটার নাম মোহাম্মদ ছালেকুজ্জমান, তিনি আমাদের চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান।
৬ নম্বর শান্তিবাজার ওয়ার্ডের বানভাসি মানুষের কাছে দ্রুত সাহায্য পৌঁছাতে নিজে কাঁধে তুলে নিয়েছেন শুকনো খাবারের বস্তা। স্যালুট জনপ্রতিনিধি।”
জুবাইরুল হক নামের একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও সার্ভেয়ার লিখেন, “আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান সাহেবের আন্তরিক সহযোগিতায় বাবুল মেম্বার এর পরিবার ও তার গরু গুলো কে উদ্বার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহপাক চেয়ারম্যান সাহেব ও উদ্বার তৎপরতায় জড়িতদেরকে উত্তম জাযা দান করুক। আমিন।”
ইলিয়াস মোর্শেদ নামের এক ব্যাংকার লিখেছেন, “এমন জন প্রতিনিধি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সত্যি আমি অভিভূত। এর আগেও দেখেছি নানা সময়ে নানা দূর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এইবার তো উনি নির্বাচিত চেয়ারম্যান, এখন উনার সুসময়, এখন তো দামী গাড়ি হাঁকিয়ে চলার সময়। তাই ছবি টা আমাকে আবেগী করে তুলেছে, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বহু গুন বেড়ে গেছে চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান বরইতলী প্রতি। দোয়া রইল আল্লাহ যেন সারা জীবন আজকের মত জনগনের জন্য জনগণের কাতারে এসে আপনাকে জনসেবার তাওফিক দান করেন।
কৃতজ্ঞতা অফুরান।”
মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন নামের একজন লিখেছেন, “যারা বরইতলীর চেয়ারম্যানকে খোঁজে পাচ্ছেন না তারা দেখুন। জনগণের চেয়ারম্যান জনগণের কাছেই আছে।”
জুবাইরুল ইসলাম রাফি নামের একজন লিখেছেন, “রাজনীতিকে একপাশে রেখে পোস্টটি করলাম।
চেয়ারম্যানের পূর্ববর্তী সময়ে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ইনি এরকমই। চেয়ারম্যান বা জনপ্রতিনিধি অনেক দেখছি কিন্তু বরইতলীতে এমন কাউকে দেখিনি।
কিন্তু বরইতলীতে এনার চেয়ে বড় মাপের নেতা আছে কিন্তু তাদের এসবের চরিত্রে খুবই কম দেখা যায়।
ভোটের বাজারে কিন্তু তারা নাট্য মঞ্চের মত লাফায়। ”
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বরইতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান জানান, ‘সেবা করতে পারার সৌভাগ্য সবার হয় না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। যেকোনো বিপদে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যমান মনে হয়। কে কি বলল না বলল আমি কর্ণপাত করি না। আমি আমার সাধ্যের ভেতরে মানবতার পাশে থাকার চেষ্টা করি। এরই অংশ হিসেবে গ্রিনলাইট ফাউন্ডেশন নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করি। যেখানে এলাকার বেশিরভাগ তরুণরা জড়িত। এটির মাধ্যমেই
চেয়ারম্যান আরও যোগ করেন, ‘এবারের মতো ভয়াবহ বন্যা অতীতে আর দেখিনি। এতো বেশি পানি কখনো হয়নি। আমার ইউনিয়নের এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে বন্যার পানি উঠেনি। স্বাভাবিকভাবে এক দুফিট পানি উচ্চতা বেশি হলেও রেললাইনের পূর্বপাশে চার-পাঁচ ফুট পানি অস্বাভাবিক বেশি হয়েছে। যদ্দরুন, কুতুববাজার (পহরচাঁদা) পুরোটায় প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শান্তিরবাজার ডেইঙ্গাকাটাসহ বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য গবাাদি পশুসহ অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের মৎস্যচাষীদের প্রায় তিন-চার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
এমএহক