ভুল চিকিৎসায় সাতকানিয়ার হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যু, ডাক্তার-নার্স পালিয়েছেন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটেছে। গত ৭ ডিসেম্বর সকাল প্রায় ১০টার দিকে ঢেমশা ইউনিয়নের মাঝির বাড়ি এলাকার ৩২ বছর বয়সী সুমি আকতারকে জটিল অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া ঘিরে গুরুতর প্রশ্ন ওঠেছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঘটনা জানাজানি হয়।

জানা গেছে, সুমি আকতার গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা রূপার চিকিৎসাধীন ছিলেন। দ্বিতীয়বারের মতো মাতৃত্বের অপেক্ষায় থাকা এই প্রসূতি হাসপাতালে আসার পর তার রক্তক্ষরণ দ্রুত বাড়তে থাকে। শেষ ৩০ মিনিটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ ১০৫/৮০, পালস ৯০ এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭ শতাংশ পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা তাকে ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ এবং রক্তক্ষরণজনিত শকে আক্রান্ত হতে পারেন বলে সন্দেহ করেন। যদিও আগের আলট্রাসনোগ্রাফিতে এ জটিলতার নিশ্চিত উল্লেখ ছিল না, তবে ক্লিনিক্যাল অবস্থায় তা প্রবলভাবে সন্দেহের কারণ হয়ে ওঠে।

পরিবারের অভিযোগ, এই জটিল পরিস্থিতি শুরু থেকেই তাদের জানানো হয়নি। সুমি আকতারকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে সাতকানিয়া ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা রূপার তত্ত্বাবধানে দুপুরের দিকে সুমি আকতার একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

সন্তান জন্মের পরপরই তার অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় দুই ইউনিট রক্ত সঞ্চালন, কনডম ক্যাথেটার পদ্ধতি এবং দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরিবার জানায়, সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টার দিকে সুমি আকতার মারা যান।

স্বজনদের দাবি, শুরু থেকেই সঠিক রোগনির্ণয় হয়নি। সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বা সঠিক অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা না করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারা বলেন, সুমি আকতার দীর্ঘদিন ধরে ডা. রূপার তত্ত্বাবধানে ছিলেন, তাই তারা চিকিৎসায় আস্থা রেখেছিলেন।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ সামনে আসতেই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা রূপা রুমের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছানোর পর রোগীর পাশে থাকা নার্স নাঈমা ও নুসরাত হাসপাতালের গেটে ড্রেস বদলে সরে পড়েন। ঘটনার পর হাসপাতালের ম্যানেজার বদিউল আলমও পলাতক বলে জানা গেছে। হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শামসুল হক তোহফার ফোনও বন্ধ।

সুমি আকতারের মামা শ্বশুর মো. ফেরদৌস বলেন, তাকে রক্ত আনতে পাঠানো হয়েছিল। ফিরে এসে দেখেন নার্সেরা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, নার্সরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে পৌঁছে গাড়ির মধ্যেই পোশাক পরিবর্তন করে চলে যান এবং ভেতরে আর ঢোকেননি। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে মামলা করার পরামর্শ দিলে তিনি বুঝতে পারেন সুমি আকতার আর বাঁচেননি।

হাসপাতালের ম্যানেজার বদিউল আলম দাবি করেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন এবং নিজেদের অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠিয়েছেন। নার্সদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা নাকি শারীরিক অসুস্থতার কারণে জায়গা থেকে সরে গিয়েছিলেন। ডা. রূপার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তারা অভিযোগ তুলে বলেন, চিকিৎসা অবহেলায় একজন তরুণ মায়ের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা রূপা, হাসপাতালের ম্যানেজার বদিউল আলম ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

ksrm