চট্টগ্রামে সরকারি গাড়ির ধাক্কায় অন্তঃসত্ত্বা কুকুরের মৃত্যু, ভিডিওর সূত্র ধরে মামলা

ডিসি হিলের ফটকের সামনে সরকারি গাড়ির ধাক্কায় একটি অন্তঃসত্ত্বা মা কুকুরের মৃত্যু ঘিরে চট্টগ্রামে বিরল এক আইনি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির পরের দিনই আদালতে মামলা গ্রহণের আবেদন জমা পড়ে। আবেদনটি করেছেন প্রাণিকল্যাণ সংগঠন ‘ঋদ্ধম্ম ফাউন্ডেশন’-এর পরিচালক, পেকুয়ার মগনামার বাসিন্দা তোফাইল আহম্মদ (২৭)। তিনি আবেদন দাখিল করেন চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফার আদালতে।

অন্ধকারে ধাক্কা, সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু

তোফাইল আহম্মদ জানান, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে ডিসি হিলের মূল ফটকের কাছে একটি অন্তঃসত্ত্বা কুকুর সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় বসে ছিল। সেই সময় ভেতর দিক থেকে একটি সরকারি পিকআপ গেট পেরিয়ে বের হয়। তার ভাষ্য, চালক হর্ন বাজাননি, থামার চেষ্টা করেননি এবং সামনে থাকা কুকুরটিকে সরানোর চেষ্টা না করে সরাসরি চাপা দিয়ে চলে যান। কুকুরটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কিছুদিন আগে অসুস্থ কুকুরটির চিকিৎসার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।

পরদিন (৫ ডিসেম্বর) কুকুরটিকে না পেয়ে আশপাশের লোকজনের মাধ্যমে তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারেন। ডিসি হিল এলাকায় প্রতিদিন রাত ৮টার পর ফটক বন্ধ থাকে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনের গাড়ি চলাচলের সময় নিরাপত্তাকর্মীরা ফটক খোলেন।

মামলার আবেদন ও ভিডিওচিত্র

আবেদনে বলা হয়, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে ফটক বন্ধ থাকা অবস্থায় নিরাপত্তাকর্মী একটি পিকআপকে বের হওয়ার অনুমতি দেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বাঁ পাশ দিয়ে থাকা অন্তঃসত্ত্বা কুকুরটি ঢালুর দিকে বসে পড়ে। তিন সেকেন্ডের মধ্যেই পিকআপটি ফটক অতিক্রম করে তাকে চাপা দেয়। এরপর গাড়িটি দ্রুত সরে যায়।

পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কুকুরটি চাপা পড়ার পর আশপাশের আরও দুইটি কুকুর ছুটে আসে, আর নিরাপত্তাকর্মী কয়েক সেকেন্ড পর গেটটি বন্ধ করে দেন। ভিডিওটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

আদালতের নির্দেশ

মামলায় গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানা-পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী নাজবীন সুলতানা জেনী জানান, প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানো এবং সড়ক পরিবহন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দণ্ডবিধির ৪২৮ ধারা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৯৮ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।

সরকারি গাড়ির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন

তোফাইল আহম্মদ জানান, ঘটনাস্থল থেকে জানা গেছে পিকআপটি জেলা প্রশাসকের বাসভবনে প্রবেশ করেছিল। তবে চালক বা নিরাপত্তাকর্মীর পরিচয় এখনো তাঁর জানা হয়নি। তিনি বলেন, শুনেছেন চালককে শোকজ করা হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসনে গিয়ে তার কোনো নথি পাননি।

জেজে/সিপি

ksrm