রেগে আগুন নওফেল, বক্তব্যে সময় বেঁধে দেওয়ায়ও জানালেন ক্ষোভ

এক হাত নিলেন মানবাধিকারকর্মীদের

1

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে সোচ্চার মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে এক অনুষ্ঠানে বিষোদগার করলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাকে সময় বেঁধে দেওয়ায়ও তিনি নিজের রাগের কথা জানিয়ে ভবিষ্যতে আর কখনও তাকে আমন্ত্রণ না জানাতেও নিষেধ করে দেন।

বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় রাজধানীতে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আয়োজিত ‘অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও করণীয় নির্ধারণ’ শিরোনামের ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বিষোদগার করতে গিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশে এ সময় বলেন, ‘আপনারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও পুলিশি অ্যাকশন নিয়ে যত কথা বলেন, তত বলেন না ওদের (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংস্থা) নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘সীমিত ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে কেউ কেউ ওয়াজের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণে ফতোয়া দেন। এটা নারী ও শিশুর জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে গেলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, তাদের কমিউনিটি আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তিরা আইন ভঙ্গ করছেন না। এই বলে তারা কোনো নিয়ন্ত্রণ মানতে চায় না। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যকে তারা বাক্‌স্বাধীনতা বলে উল্লেখ করে। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেসব বক্তব্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ওই ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্ল্যাটফর্মের সহায়তা পাওয়া যায় না। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ব্যবস্থা নিতে গেলে প্ল্যাটফর্মগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাক্‌স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে তারা বাধার সৃষ্টি করে। বিদেশি অনুদানের স্বার্থে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাগুলো কিছু বলতে চায় না।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে দাঙ্গা ছড়াল। অস্থিতিশীলতা তৈরি হলো। কেউ তো ফেসবুক বন্ধের কথা বলছেন না। মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে রাজনৈতিক ভূমিকা অগ্রাহ্য করে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে কথা বলা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে।’

১৫ মিনিটের সময়সীমা নিয়েও রাগ

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওই ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। কিন্তু শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল অন্য একটি বৈঠকে থাকতে হবে— এ কথা জানিয়ে আগে বক্তব্য দিতে চান। এ সময় গোলটেবিল বৈঠকের মডারেটর আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল তাকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এজন্য ৬ মিনিট সময় বেঁধে দেন।

উপমন্ত্রী নওফেল বক্তব্য শেষ করার পর আসকের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল উপমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি না জেনেই কিছু কথা বলেছেন। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানোর এসব বিষয়ে সুপারিশ করে থাকি।’

এ সময় উপমন্ত্রী আবার মাইক নেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি এ সময় বলেন, ‘আপনারা অনুষ্ঠানে কিছু শিষ্টাচার রাখবেন। বিশেষ অতিথিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এটা অশোভন, দৃষ্টিকটু।’

ওই সময় আসকের নির্বাহী পরিচালক মনোয়ার কামাল উপমন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনাকে তো ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হলো।’ এ সময় রাগান্বিত হয়ে নওফেল বলেন, ‘এমন ব্যবহার করবেন না, যা শোভন নয়। অভিযুক্ত তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) লোক আপনাদের বোর্ড অব গভর্ন্যান্সে আছে। আপনারা আর কখনেও আমাকে ইনভাইট করবেন না। আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে কখনও আসব না।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

1 মন্তব্য
  1. Faruk Hossain বলেছেন

    মরহুম মহিউদ্দীন চৌধুরীর পুত্র হিসাবে ক্ষমতা হাতে পেয়ে নিজেকে সব জান্তা ভাববেন না। রাজনৈতিক জীবনে আপনার যে অবদান তাতে করে ওয়ার্ডের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হতে পারতেন না। হয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। ক্ষমতার কারনে এখন আপনার জমিনে পা পড়েনা। দলের দুর্দিনে কি অবদান রাখেন সেটা দেখার অপেক্ষায়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm