s alam cement
আক্রান্ত
৪০২৮৩
সুস্থ
৩৪০৭৯
মৃত্যু
৩৮৮

‘শিয়াল পন্ডিতের প্রতারণার ফাঁদ’ আনোয়ারায় শত ব্যবসায়ীর মাথায় হাত

জেলও খেটেছেন আবু তৈয়ব, বেরিয়ে আবার প্রতারণা

0

চালাক শিয়াল পন্ডিতের কাছে নিজের সাত ছানাকে লেখাপড়া করতে দিয়েছিল কুমির। কিন্তু লোভী শিয়াল এক এক করে ছয় ছানাকেই খেয়ে নিল। কুমির যখন তার ছানাদের দেখতে এলো, তখন একই ছানাকে গুণে গুণে সাতবার দেখালো। সহজ সরল কুমির ঠকলো চালাক শেয়ালের প্রতারণায়।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায়ও তেমন এক ‘চালাক’ ডেভেলপার ব্যবসায়ীর প্রতারণার শিকার হলো শতাধিক ব্যবসায়ী। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনীতে হাজী এ আলী শপিং কমপ্লেক্স নামে চারতলার একটি মার্কেটে একই দোকান একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেছেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু তৈয়ব।

ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সূচনা কনস্ট্রাকশনের মালিক আবু তৈয়ব দোকান বরাদ্দের নামে দশ বছর আগে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিলেও এখনও পর্যন্ত একজন ব্যবসায়ীও দোকান বুঝে পাননি। উল্টো এক দোকান একাধিকবার বিক্রি, বাড়তি মূল্য দাবি, তালবাহানা ও প্রতারণার অভিযোগ ওঠেছে আবু তৈয়ব চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

প্রায় ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে একই স্পেস দ্বিতীয়বার বিক্রির অভিযোগ এনে বুধবার থানায় অভিযোগ করেছেন এই মার্কেট থেকে কমার্শিয়াল স্পেস কেনা স্থানীয় এক ব্যবসায়ী।

জানা গেছে, চাতরী চৌমুহনী বাজারে হাজী এ আলী শপিং কমপ্লেক্স নামে চার তলা মার্কেট নির্মাণে ২০১০ সালে চুক্তিবদ্ধ হয় সূচনা কনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। জমির মালিক চাতরী চৌমুহনী এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মোহাম্মদ ইসমাইল, মোহাম্মদ ইউনুছ ও মোহাম্মদ রফিক নির্দিষ্ট সময়ে তাদের জায়গা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবু তৈয়ব চৌধুরীকে বুঝিয়ে দেন। তৈয়ব চৌধুরীর বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলার কালারপোল মোহাম্মদ নগর গ্রামে।

Din Mohammed Convention Hall

চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী সমুদয় কাজ সম্পন্ন করে ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কেটটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। চুক্তিমতে সালামি বাবদ বিক্রির মূল্য পাবে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আর মার্কেট চালু হওয়ার পর মাসিক ভাড়া ভোগের অধিকার পাবেন জমি মালিক। সে অনুযায়ী রঙচঙা বিজ্ঞাপন প্রচার করে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। চটকদার বিজ্ঞাপনে শতাধিক ব্যবসায়ী দোকান কিনতে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা জমা দেন। এক দশক হওয়ার পরও দোকানের পজিশন বুঝে পায়নি ক্রেতারা। এ নিয়ে শালিশ-বিচার, দেন দরবারও কম হয়নি। কিন্তু মিলেনি কোনো সমাধান।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী জানান, মার্কেটের নিচ তলা ও দোতলায় দোকান দেওয়ার কথা বলে অন্তত ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক তৈয়ব চৌধুরী। এ নিয়ে নানা তালবাহানার পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেন আলোচিত তৈয়ব চৌধুরী। এসময় প্রতারণার অভিযোগে জেলেও যান। ২০২০ সালের প্রথম দিকে ফিরে এসে এক দোকান দ্বিতীয় বার বিক্রি করা শুরু করেন।

ক্ষতিগ্রস্থরা বিষয়টি নিয়ে ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দ্বারস্থ হলে ৬ মাসের মধ্যে দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তৈয়ব। জানা যায়, সম্প্রতি দোকান হন্তান্তরের নামে সূচনা কনস্ট্রাকশনের মালিক তৈয়ব চৌধুরী অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে অন্তত ৪০ জন ব্যবসায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। পরে আবারও থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় সালিশি বৈঠক হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দোকান বুঝে না পেলে মামলায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে সূচনা কনস্ট্রাকশনের মালিক আবু তৈয়বের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে শেভরণ আনোয়ারা শাখার ম্যানেজিং পার্টনার মীর মোশাররফ হোসেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় মার্কেটের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার পুরো স্পেস কিনতে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে রেজিস্ট্রার্ড বায়না করলেও তৈয়ব চৌধুরী টাকা পাওয়ার পর নয়ছয় শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি মার্কেটের কাজ শেষ করেননি। পজিশন বুঝিয়ে দেয়ার পরিবর্তে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিক সেটা পুনরায় বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

এ নিয়ে বুধবার শেভরন আনোয়ারা শাখার ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানেও সূচনা কনস্ট্রাকশনের মালিক আবু তৈয়ব চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন। শেভরণ আনোয়ারা শাখার মানেজিং পার্টনার মীর মোশাররফ হোসেন জানান, আবু তৈয়ব চৌধুরী শতাধিক ব্যবসায়ীকে পথে বসিয়েছেন। দোকান বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ১০ বছর ঘুরিয়েছেন। এক দোকান দুই তিন বারও বিক্রি করেছেন। মানুষ এই প্রতারণা থেকে মুক্তি চায়। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা তাদের পরিশ্রমের টাকায় কেনা দোকান যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বুঝে পায় সেই দাবি জানান তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাজী এ আলী শপিং কমপ্লেক্সের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান সূচনা কনস্ট্রাকশনের মালিক আবু তৈয়ব চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ দিলে কী হবে। আমার কী ফাঁসি হবে? আমি সব টাকা পাইনি। বায়না করেছি কী হয়েছে। সব টাকা পাইনি বলেই বিক্রি করে দেয়ার কথা চিন্তা করছি। আমার কাছেও অনেক সাংবাদিক আছে। আমি সাংবাদিকের কাছে যাইনি। আমি সন্ত্রাসী নই। সন্ত্রাস করতে আসেনি। তারা আমাকে কখনো বিএনপি বানাচ্ছে, কখনো জামাত বানাচ্ছে। আমি চোর নই, ডাকাতও নই।’

মার্কেট করতে ১০ বছরের বেশি সময় প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা আমার সাথে জায়গার মালিকের বিষয়। আমি জনে জনে জবাব দেব না।’

আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম দিদারুল ইসলাম বলেন, আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনী বাজারে সূচনা কনস্ট্রাকশনের হাজী এ আলী শপিং কমপ্লেক্সে শেভরন আনোয়ারা শাখার মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেএস

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm