চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সিএনজি অটোরিকশা-পিকআপ ভ্যান মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৭ মে) সকালে উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজারের উত্তরে পিএবি সড়কের হযরত রাজ ছিলা ফকির (রহ.) মাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত হন জিয়াউর রহমান (৩৬) ও তার আড়াই বছরের কন্যা মোছাম্মৎ হূমাইয়া আকতার। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী শিউলি আকতার (৩০) ও অপর কন্যা মোছাম্মৎ আমেনা আকতার (৫) গুরুতর আহত হন।
নিহত জিয়াউর রহমান পেশায় কৃষক। জিয়াউর স্বপরিবারের ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থেকে শ্বশুর বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি এলাকায় যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন আহত শিউলি আকতারের ভাগিনা মোহাম্মদ মিশুক।
আনোয়ারা ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ দুলাল কুমার মিত্র জানান, ‘পিকআপ ভ্যানের সাথে বিপরীতমুখী সিএনজি অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখানে জিয়াউর রহমান নামে একজন মারা যান এবং নিহতের সাথে থাকা নারীসহ দুই কন্যা শিশু গুরুতরভাবে আহত হয়। তবে ঘটনাস্থল কাউকে পাওয়া যায়নি।’
ঘটনার পর সকাল ১০ টায় খবর পেয়ে ছুটে যান স্থানীয় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম। হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, নিহতের লাশ নিচে এবং আহতরা পড়ে আছে এক কোণে। তাদের এ অবস্থা দেখে তিনি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার আবু জাহিদ মুহাম্মদ সাইফুদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের কথা জানান।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অজ্ঞান অবস্থায় শিশু কন্যা আমেনার মা শিউলি আকতার বলতে পারছিল না কোনো নাম ঠিকানাও। আর সে মুহূর্তে দুর্ঘটনার খবরটিও পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না তাদের স্বজনদের কাছে। আর কোনো উপায় না পেয়ে আমি নিজেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদকে ফোন দিয়ে জানাই হাসপাতালের অবস্থা। তিনিই সাথে-সাথে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করে দেন এ্যাম্বুলেন্সের। এমসয়ে ছুটে আসেন তাদের এক আত্মীয়ও।’
জাহাঙ্গীর বলেন, ‘নিহতের লাশ হাসপাতালে রেখে আহতদের নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর সাথেই বাবার সঙ্গী হয়ে চলে যায় শিশু কন্যা হূমাইয়াও। অপরদিকে চমেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মা মেয়ে দুইজন।’
আহত শিউলি আকতারের ভাগিনা মোহাম্মদ মিশুক জানান, ‘ঈদে বেড়ানোর জন্য আমার খালা শিউলি মামা ও তাদের মেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়ি চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে আসছিলেন। কিছুক্ষণ পর শুনলাম যাওয়ার পথে আনোয়ারায় সড়ক দুর্ঘটনায় মামা জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে মারা গেছে। আমি দ্রুত এসে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মোছাম্মৎ হূমাইয়া আকতার মারা যান।’
তিনি আরো জানান, ‘শিউলি আকতারের অবস্থাও আশংকাজক। তাঁর কোমর ও পায়ের হাঁড় ভেঙে গেছে, তবে শিশু আমেনা আকতার আঘাত পেলেও শারীরিকভাবে আল্লাহ্ রহমতে সুস্থ আছে।’
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে একই পরিবারের ৪ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান নামে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি ৩ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।’
আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম দিদারুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত জিয়াউর রহমানের লাশ তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর গাড়ি ২টি পালিয়ে গেছে। তবে এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।’
কেএস