উৎসবে মুখর এপিক হেলথ কেয়ারের দশকপূর্তি: রক্তদান থেকে র‍্যালি, ছিল মিলনমেলাও

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন ধারা তৈরির পর আজ এক দশক পেরিয়ে এসেছে ‘এপিক হেলথ কেয়ার’। দেশের প্রথম আইএসও স্বীকৃত ল্যাবরেটরি হিসেবে সূচনা নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি এখন চট্টগ্রামবাসীর কাছে সেবা ও নির্ভরতার প্রতীক। যাত্রার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটি আয়োজন করেছে বর্ণাঢ্য উৎসব—যেখানে ছিল র‌্যালি, রক্তদান, সম্মাননা, সাংস্কৃতিক আয়োজন ও পারিবারিক মিলনমেলা।

উৎসবে মুখর এপিক হেলথ কেয়ারের দশকপূর্তি: রক্তদান থেকে র‍্যালি, ছিল মিলনমেলাও 1

৮ অক্টোবর সকালে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পূর্ব গেইট শাখায় শেষ হয় বর্ণাঢ্য ‘আনন্দ র‍্যালি’। এতে অংশ নেন এপিকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। র‌্যালির পর স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি, যা মানবিক উদ্যোগের প্রতীক হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এপিক হেলথ কেয়ার গত এক দশকে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছে, তা প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এপিক হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এস এম লোকমান কবির। সঞ্চালনায় ছিলেন ডা. হামিদ হোছাইন আজাদ। উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস এম আবু সুফিয়ান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আনোয়ার হোসেন, টি এম হান্নান, মো. জসীম উদ্দিন, তহমিনা মরিয়ম, তানজিনা কবির, ডা. সোমেন পালিতসহ অনেকে।

পরদিন ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ‘এপিক ফ্যামিলি নাইট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’ চট্টগ্রামের ‘দ্যা কিং অব চিটাগং’ মিলনায়তনে। এটি ছিল বিনোদন, সম্মাননা ও পারিবারিক বন্ধনের এক মেলবন্ধন। অনুষ্ঠানে লং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান, বিতর্ক, নাটক, নৃত্য, সংগীত, গেম-শোসহ নানা আয়োজন ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁদের বক্তব্যে বলেন, ‘এপিক হেলথ কেয়ার শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি পরিবার—যার মূল লক্ষ্য মানুষের সুস্বাস্থ্য ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা।’

গত এক দশকে এপিক হেলথ কেয়ার চট্টগ্রামের চিকিৎসা খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনটি শাখায় ১৫০ এর বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে আধুনিক ডায়াগনস্টিক সুবিধা। ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত মানের স্বীকৃতি হিসেবে তারা পরপর দুইবার অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক আইএসও এক্রিডিটেশন সনদ। এপিক গোল্ডেন কোর ভবনে চালু হয়েছে ‘এপিক ডেন্টাল কেয়ার’—যেখানে রয়েছে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেবা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও শিশুদের জন্য স্পেশালাইজড পেডিয়াট্রিক বিভাগ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল পূর্ব গেইট শাখায় স্থাপন করা হয়েছে বিশ্বমানের ব্লাড ব্যাংক ও ট্রান্সফিউশন সেন্টার, যেখানে স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাচ্ছে আধুনিক ‘ডে-কেয়ার সার্ভিসেস’। সংক্রামক রোগ শনাক্ত ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের বেসরকারি খাতে প্রথম ‘বায়োসেফটি লেভেল থ্রি (BSL-3)’ ল্যাব। এখানেই প্রথম চট্টগ্রামে জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়, যা জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার জন্ম দেয়।

রোগীরা যেন সহজেই রিপোর্ট পান, সেজন্য চালু করা হয়েছে অনলাইন রিপোর্ট ডেলিভারি সিস্টেম ও কেন্দ্রীয় কল সেন্টার। দন্তচিকিৎসায় ‘সিবিসিটি’ পরীক্ষার সুযোগ এনে এপিক ডেন্টাল কেয়ার এখন চট্টগ্রামের অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান। এপিক হেলথ কেয়ার দেশের ১২০টি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের দুই হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়োজন করেছে জাতীয় পর্যায়ের ‘ন্যাশনাল এনাটমি অলিম্পিয়াড’—যা তরুণ চিকিৎসকদের মাঝে গবেষণামুখী আগ্রহ তৈরি করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির পরবর্তী লক্ষ্য আরও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি সংযোজন। শিগগিরই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ‘ক্যাডক্যাম ডেন্টিস্ট্রি’ ও অত্যাধুনিক ডেন্টাল ল্যাবরেটরি।

দশ বছর পূর্তির এই উদযাপন শুধু একটি অর্জনের স্মারক নয়—এটি ভবিষ্যতের অঙ্গীকারও বটে। এপিক হেলথ কেয়ার আগামীর পথে এগিয়ে যেতে চায় আরও নিখুঁত, মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। অনুষ্ঠানের শেষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শুভানুধ্যায়ী ও সেবাগ্রহীতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ksrm