মহামারী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৩১ জন। আর আক্রান্তের সংখ্যা ১২ কোটি ছুঁই ছুঁই; ১১ কোটি ৯৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৬৭ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৬ লাখ ৫১ হাজার ৭২৮ জন। অন্যদিকে এ মহামারি থেকে বিশ্বব্যাপী সুস্থ হয়েছেন ৯ কোটি ৬২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৪ জন।
শনিবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০ টার সময় আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যাও যুক্তরাষ্ট্রে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৩ হাজার ৪২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ২০ লাখ ৩১ হাজার ২২০ জন।
করোনা শনাক্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৬ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬ জনের। মৃত্যু বিবেচনায়ও দেশটি বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ব্রাজিলে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৯৮০ জন।
করোনাভাইরাস শনাক্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। এই দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯১ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৩ জনের। ভারতে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৭ জন।
করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ৬১৭ জন। মারা গেছেন ৯১ হাজার ২২০ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৯ জন।
আক্রান্ত বিবেচনায় পঞ্চম স্থানে থাকা যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৬ জন। মারা গেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৪ লাখ ২৪ হাজার ৯২ জন। তালিকায় ফ্রান্স ষষ্ঠ, স্পেন সপ্তম, ইতালি অষ্টম, তুরস্ক নবম ও জার্মানি দশম স্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশটিতে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে ধীরে ধীরে তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপাইনে। এরপর গত ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
৩৩তম স্থানে থাকা বাংলাদেশে শুক্রবার (১২ মার্চ) পর্যন্ত মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশে করোনা পরিস্থিতি ফের উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ১৪ হাজার ৩২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪০৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এক মাসের ব্যবধানে ১২ মার্চ দেশে ১৬ হাজার ১১১টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৬ জন। একইসঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসের এ দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন থাকলেও ১২ মার্চ এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
এক মাস আগে নমুনা পরীক্ষার হিসেবে শনাক্তের হার ছিল দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। কিন্তু এদিন নমুনা পরীক্ষার হিসেবে শনাক্তের হার ছয় দশমিক ৬২ শতাংশ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর অনেকেই ভুল ধারণা করছেন যে, টিকা নিলে আর করোনা হবে না। মানুষ পরিবার নিয়ে কক্সবাজার, সিলেট ও সুন্দরবনসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছেন। মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। ফলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) -এর বর্তমান ও সাবেক দুই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন ও ড. মোশতাক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা আরও জোরদারের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
এমএহক