গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে চট্টগ্রামে প্রদর্শিত হয়েছে মঞ্চনাটক ‘বুকের ভেতর বাবুই পাখি’।
‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের আয়োজনে ও পৃষ্ঠপোষকতায় গত রোববার (১০ আগস্ট) ও সোমবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এবং থিয়েটার ইনস্টিটিউটের মঞ্চে এই নাটক প্রদর্শিত হয়।
নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। সহকারী হিসেবে ছিলেন ফাহমিদা আকতার।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন—রাশেদুল ইসলাম, ফাহমিদা আকতার, আছাদ বিন রহমান, আল আমিন ইসলাম, আফিয়া ইবনাত ওয়াফা, নাঈম আহমেদ ইমন, আফরিন তিশা, রোহান আল মোহান, শাহরিয়ার প্রান্ত, সুজয়, তোয়া, সাব্বির, জাহাঙ্গীর, রাই, তারা, পূর্ণতা, রিমি, হামিদ, দ্বীপ, অনুভূ।
নাটকের সঙ্গীত পরিকল্পনায় ছিল সেমন্তী, আলোক পরিকল্পনায় ছিলো আসলাম ও সঞ্জিত। নাটকের সঙ্গে যুক্ত সকলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নাট্যকলা বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী।
নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, জুলাই এক দুঃসহ সময়, যা আমাদের একত্রিত করেছিল। আবু সাঈদের প্রসারিত দুই হাত থেকে অজপাড়াগাঁয়ের হৃদয় তরুয়ার শহীদী মৃত্যু আমাদেরকে নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমরা স্বৈরাচারের বিশাল পাথর আমাদের ঘাড় থেকে নামাতে পেরেছি। সেরকমই এক জীবন আমাদের নাটকের বৈশাখের। সেও এই একই ভোগবাদী সমাজের স্বপ্ন ও বাস্তবতার বিস্তর ফারাক নিয়ে বড় হয়ে ওঠা একজন নতজানু নাগরিক। যেই জীবনের বেশিরভাগ জুড়েই আছে সয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আছে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস। সেই জীবন বৈশাখ ও তার পিতা-মাতাকে হতাশ করে-তাদের স্বপ্ন থেকে তাদেরকে বিচ্ছিম্ন করে। তবুও বৈশাখ স্বপ্ন দেখতো এক বৈষম্যবিহীন সময়ের। সে অনুভব করতো সেই সময় নির্মাণ এমনি এমনি হয় না- তার জন্য লড়াইটাও করতে হয়।
তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজন যখন উপস্থিত হয়, আমাদের বৈশাখ ঠিকই হাজির হয় রাজপথে। অনেক না পাওয়ার গ্লানি ও অসংখ্য আকাঙ্ক্ষার জমিনে দাঁড়িয়ে বৈশাখ অন্যদের মতোই স্বৈরাচারের গুলির সামনে স্লোগানে কণ্ঠে জোর লাগায়।
এবং যুদ্ধের চিরাচরিত নিয়ম সম্ভবত এই যে, কেউ পুড়ে যায় বলেই কেউ আলো পায়। আর সেই নিয়মেই সম্ভবত ভীড়ের ভেতর বৈশাখ হয়তো হারিয়ে যায় অথবা আমরাই হয়তো হারিয়ে ফেলি বৈশাখকে। আর আমরা যারা হারাই না তারা হয়তো সময়ের পরিক্রমায় বৈশাখদের নিয়ে বিস্মৃত হই। তবুও কেউ কেউ থাকে, যারা বিস্মৃত হয় না- যারা স্মৃতিকে আকড়ে ধরে জীবন্ত রাখে বৈশাখদের। তেমনই এক স্মৃতি আকড়ে আছে আমাদের নাটকের আরেক চরিত্র নির্জন।
দুই দিনে মোট তিনটি প্রদর্শনী মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটির। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নাটকটির প্রদর্শনী মন ছুঁয়েছে বলে উপস্থিত দর্শকরা জানিয়েছেন।
৪ আগস্ট টিআইসিতে নাটক দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকতা চৌধুরী রওশন ইসলাম, নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ দিদারুল আলম এবং সহকারি প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সৈয়দ আয়াজ মাবুদ।
নাটকটি জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে জেলা পরিষদ আয়োজিত আইডিয়া প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়ে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছিল।