গাইনি ডাক্তারের যৌন হয়রানির জালে নারী ডাক্তার ছাড়াও রোগীর স্বজনরা
কক্সবাজার সদর থেকে পেকুয়ায় বদলি, সেখানেও শঙ্কা
ছয় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক যৌন হয়রানির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনলেন একজন ডাক্তারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে কর্মবিরতিও গেলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এমন ঘটনা ঘটছে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। আর অভিযোগের সব তীরই এখন ওই হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে। এই ডাক্তারের বিরুদ্ধে শুধু ইন্টার্ন নারী ডাক্তারদেরই নয়, এমনকি রোগীর নারী স্বজনদেরও যৌন হয়রানি ও অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই ডা. মাহফুজুর রহমানের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন রোগী ও রোগীর নারী স্বজনরা।
তবে অভিযোগ পাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের বেতন-ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন সদর হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে ওইদিন সকাল থেকে কোনো ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা আর কাজে যোগ দেননি।
এদিকে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডা. মাহফুজুর রহমানকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মমিনুর রহমান।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো ওই ছয় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের তিন মাসের এক্সটেনশন ও বেতন-ভাতা কেটে রাখার আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে ইন্টার্নরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, ২৬ নভেম্বরের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো ইন্টার্নদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ছয় ইন্টার্নের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। অথচ অভিযুক্ত ডা. মাহফুজুর রহমান শুধু নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক নয়, রোগীর স্বজনদের সঙ্গেও এমন আচরণ করেন। যা লিখিত আকারে দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানান, ছয়জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারি করা আদেশ প্রত্যাহার, অভিযুক্ত গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এ কর্মবিরতি চলতে থাকবে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে কক্সবাজারের টেকনাফে এক কলেজ ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ওই বছরের ৪ নভেম্বর একজিমা রোগে আক্রান্ত হওয়া ওই কলেজ ছাত্রী (১৯) টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। কর্মরত চিকিৎসক তাকে সেখানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর দুপুরে পায়ের ড্রেসিং করতে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় ওই তরুণীকে। এ সময় ডা. জাকের হোসেন তার সঙ্গে থাকা নার্স ও এক পুরুষ হেলপার উপস্থিত থাকা অবস্থায়ই সম্পূর্ণরূপে কাপড় খুলতে বলেন ওই তরুণীকে। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত ডা. জাকের হোসেন জোর করে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন অংশ স্পর্শ করেন। এ সময় প্রতিবাদ করলে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেওয়া হয় ওই তরুণীকে। অভিযুক্ত ডাক্তার জাকের হোসেন জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থার (আইওএম) পক্ষ থেকে ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছিলেন। পরে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তার ফলাফল জানা যায়নি।
সিপি