চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে পুলিশের ‘টরাস’, নেজামবাহিনীর মুঠোয় কোতোয়ালী থানা লুটের অস্ত্র

পলাতক ছয় অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত জামায়াতের ইসলামী কর্মী নেজাম উদ্দিনের ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তলটি ছিল নগরীর কোতোয়ালী থানা থেকে লুট করা। এতে একসঙ্গে মোট ১৭ রাউন্ড গুলি রাখা যায়। নেজামের রক্তাক্ত শরীরের পাশেই পড়ে থাকা পিস্তলটির পাশাপাশি ছয় রাউন্ড গুলির খোসাও উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেদিনের ঘটনায় একই মডেলের আরও পিস্তল নেজামের অনুসারীদের হাতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানতে পেরেছে। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেছে। এতে নেজাম ও ছালেকের অনুসারী ৬ অস্ত্রধারীসহ অজ্ঞাতনামা আরও অন্তত ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর জ্ঞাতসারে অবৈধ অস্ত্র ও কার্তুজ হেফাজতে রাখার অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে নিহতদের পরিবার বা আহতদের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেননি।

নেজামের মুঠোয় ছিল পুলিশের ‘টরাস’ পিস্তল

নেজামের ব্যবহৃত অস্ত্রটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেটি ছিল ‘টরাস টিএইচ’ মডেলের ৯ মিলিমিটার ক্যালিবারের পিস্তল। ৪.২৭-ইঞ্চি ব্যারেল ও অ্যাডজাস্টেবল টু-ডট রিয়ার সাইট সুবিধার কারণে সেমি-অটোমেটিক অস্ত্রটি দিয়ে নিখুঁত লক্ষ্যে গুলি করা যায়। মাত্র ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পিস্তলটির সঙ্গে দুটি ম্যাগাজিন থাকায় এতে ১৭-রাউন্ড গুলি রাখা যায়, যা দিয়ে অনেকক্ষণ শুট করা যায়। বিশেষায়িত পিস্তলটি তৈরি হয় ব্রাজিলের সাও পাওলোর কারখানায়।

২০২১ সালের শুরুতে পুলিশ সদস্যদের ‘অপারেশনাল গিয়ার ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ দেওয়া হয়। সেই বেল্টে রাখার জন্য চিরাচরিত চাইনিজ রাইফেলের বদলে দেওয়া হয় ছোট আকারের শক্তিশালী ‘টরাস’ পিস্তল। গত অন্তত চার বছর ধরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশে (সিএমপি) ‘টরাস’ পিস্তলটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া নেজামের ব্যবহৃত পিস্তলটির বডি নাম্বার TKU39161, যার বডির ওপরের অংশের এক পাশে TAURUS BP-2017 MTC MADE IN BRAZIL এবং অপরপাশে TH9 9X19 লেখা আছে। অন্যদিকে ৬টি গুলির খোসার পিছনের অংশে ইংরেজিতে NR BP 2020 লেখা আছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার কয়েক ঘন্টার মাথায় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় হামলা চালায় কয়েক হাজার লোক। থানার গেট ভেঙে প্রবেশ করে ভেতরে ঢুকে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। লুট করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়িও। এ সময় ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা প্রাণ বাঁচাতে দেয়াল টপকে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে সরে পড়েন। কেউ কেউ আবার পুলিশের পোশাক খুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যান।

থানা লুটের অস্ত্র আরও ঢুকেছে সাতকানিয়ায়

গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সাতকানিয়া এলাকায় ঢুকেছে— এমন সন্দেহের কথা জানা গেছে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে। গণপিটুনিতে নিহত নেজামের ব্যবহৃত পিস্তলের অনুরূপ একই মডেলের আরও পিস্তল নেজামের অনুসারীদের হাতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানতে পেরেছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামও বলেছেন, ‘তাদের (নেজাম ও ছালেক) লাশের পাশে যে অস্ত্র ছিল, এটি কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র। সেদিন সেখানে আরও অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছিল। সেগুলোও একই অস্ত্র বলে আমরা জানতে পেরেছি। পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র তাদের কাছে কিভাবে গেল, আমাদের সেটা খুঁজতে হচ্ছে।’

নেজামের সহযোগী জামায়াতকর্মী আবু ছালেক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্টের আগে ও পরে চট্টগ্রাম শহরেই ছিলেন— এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের কারও কারও সন্দেহ, কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র লুটের সময় ছালেক নিজে সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট কোতোয়ালী থানা লুটের সময় শুরুতে একদল লোক এসে থানায় আগুন ধরিয়ে চলে যায়। এদের বেশিরভাগই ছিলেন ছাত্র। তারা তেমন কিছু সঙ্গে করে নিয়ে যায়নি। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে অপর একটি দল এসে থানার ভেতরে ঢোকে। এ সময় তারা অস্ত্রাগার থেকে বেছে বেছে হালকা অস্ত্রগুলো লুট করে। বিভিন্ন মামলার ডকেটগুলো ঠান্ডা মাথায় পুড়িয়ে দেয়।

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালী থানা থেকে অন্যান্য অস্ত্রের পাশাপাশি শুধু ব্রাজিলিয়ান ‘টরাস’ মডেলের পিস্তল লুট হয়েছে ৩৩টি। সেই পিস্তলের বুলেট লুট হয়েছে অন্তত ৬০০টি। এর মধ্যে হাতেগোনা তিন-চারটি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে, যার একটি জামায়াতকর্মী নেজামের হাতে ছিল।

ছনখোলায় তিন মাসে আটবার গেছেন নেজাম-ছালেক

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াতে ইসলামী কর্মী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক গত তিন মাসে আটবার ছনখোলা এলাকায় গিয়েছিলেন সশস্ত্র সহযোগীদের নিয়ে। সেখানকার দোকানিদের কাছ থেকে অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন তারা। স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের স্ত্রীকেও তারা মারধর করেছেন কয়েকদিন আগে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।

সাতকানিয়ার ঘটনা নিয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘গত তিন মাসে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক ওই এলাকায় আটবার গিয়েছিল। ঘটনার দিন তারা সাতটি সিএনজি নিয়ে ছনখোলায় যায়। দোকানিদের অস্ত্র প্রদর্শন করে। এর আগে তারা ওই এলাকায় এক স্থানীয় মেম্বারের স্ত্রীকে মারধর করেছিল। এসব নিয়ে স্থানীয়দের মনে ক্ষোভ ছিল, সেখান থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে।’

এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘বলা হচ্ছে, একটি দলের একজন চেয়ারম্যান এই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন—এমন কিছু আমরা পাইনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কোনো সংশ্লিষ্টতা সেখানে ছিল না। বরং একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের আমরা অবিরত খুঁজে যাচ্ছি। তাদের সেখানে অবস্থান করার, এমন ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই।’

পুলিশের মামলার অভিযোগে যা আছে

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সাতকানিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানের দায়ের করা মামলায় নাম উল্লেখ করে মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের সকলেই নেজাম ও ছালেকের সহযোগী অস্ত্রধারী। আসামিরা হলেন— কাঞ্চনা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহাম্মদের পুত্র আলমগীর (২০), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তারের পুত্র ফরহাদ (৪০), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলমগীরের পুত্র মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুক, উত্তর কাঞ্চনা দীঘির পাড় এলাকার গুরা মিয়ার পুত্র সাইফুদ্দীন প্রকাশ সাবু এবং এওচিয়া ইউনিয়নের চুড়ামণি এলাকার আব্বাস উদ্দিনের পুত্র সিএনজিচালক হারুন। এছাড়া ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘৩ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে সাতকানিয়ার আনু ফকিরের দোকান এলাকায় অবস্থানকালে খবর পান, এওচিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছনখোলা পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদের পাশে ডাকাত পড়েছে এবং ওই স্থানে গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর স্থানীয় লোকজনসহ ছনখোলা পশ্চিম পাড়ার জনৈক ফখরুলের মুরগির দোকানের সামনে রাস্তার উপর পৌঁছে আবু ছালেক (৩৮), ও নেজাম উদ্দিনের (৪২) রক্তাক্ত মৃতদেহ এবং মৃত নেজাম উদ্দিনের মাথার ডান পাশে একটি নাইন এমএম সচল পিস্তল এবং মৃতদেহসহ দোকানের আশেপাশে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় ৬টি কার্তুজের খোসা পড়ে থাকতে দেখা যায়। উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পর্যাপ্ত টর্চ ও বৈদ্যুতিক আলোতে পাওয়া উল্লেখিত আলামতসমূহ জব্দ করি। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহয়াতায় উপস্থিত সাক্ষী ফরিদুল আলম ও মোহাম্মদ আবুল কাশেমের সনাক্তমতে মৃত আবু ছালেক ও মৃত মো. নেজাম উদ্দিনের মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। শেষে ঘটনাস্থল সংলগ্ন ছনখোলা পশ্চিম পাড়া আমে মসজিদের পুকুর থেকে আসামিদের যাতায়াতে ব্যবহৃত একটি নাম্বারবিহীন পুরাতন সবুজ রংয়ের সিএনজিচালিত অটোরিক্সা স্থানীয় লোকজনের সহায়তার পুকুর থেকে তুলে জব্দ করি।’

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ৩ মার্চ রাত ৯.৪৫টার দিকে আবু ছালেক ও মো. নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এজাহারনামীয় ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন অস্ত্রধারী হেলমেট পরিহিত অবস্থায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ৬-৭টি সিএনজিযোগে ছনখোলা পশ্চিম পাড়া বাজারে ঘোরাফেরা করে। স্থানীয় লোকজন ডাকাত সন্দেহে আসামিদের ধাওয়া করলে আসামিরা তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে আটক করে। আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে এওচিয়ার ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওবায়দুল (২০), নাছির (৩৫), আব্বাস (৩০), মামুন (৪০), সাইদ (২৪) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আহত হওয়ার কারণে উপস্থিত লোকজনদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত জনতা আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং আসামিদের ফেলে যাওয়া সিএনজি গাড়িটি ভাংচুর করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। উত্তেজিত জনতার মারধরের ফলে ঘটনাস্থলে আবু ছালে ও নেজাম উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এজাহারনামীয় ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন কৌশলে গুলি বর্ষণ করতে করতে ঘটনাস্থল থেকে সিএনজিযোগে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়ার সময় এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামির চালিত অজ্ঞাত নাম্বারের সিএনজি এবং তাদের ব্যবহৃত জব্দকৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি ঘটনাস্থলে ফেলে যায়।’

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয়ভাবে তদন্তকালে এজাহারনামীয় আসামিগণের স্বভাব-চরিত্র ভাল নয় এবং তারা মৃত আবু ছালেক ও মৃত মোঃ নেজাম উদ্দিনের সহযোগী মর্মে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। বর্ণিত আসামিরা ইতিপূর্বেও ঘটনাস্থল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে মর্মে জানা যায়। মৃত আবু ছালেক ও নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে এজাহারনামীয় ১ থেকে ৬ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ১৪-১৫ জন আসামি পরস্পর যোগসাজসে ও জ্ঞাতসারে অস্ত্রশস্ত্র নিজেদের হেফাজতে রেখে ‘দ্য আর্মস অ্যাক্ট ১৮৭৮’ এর ‘১৯এ’ ধারার অপরাধ করেছে।’

অস্ত্রধারীরা পুরনো দাগী

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াতকর্মী আবু ছালেকের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা, বিস্ফোরক ও চুরিসহ ৮টি মামলা আছে বলে জানান পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম। তবে থানার রেকর্ডপত্র ও সিডিএমএস পর্যালোচনায় আবু ছালেকের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে চারটি মামলার তথ্য মিলেছে। এগুলো হচ্ছে— ২০২৩ সালের ২২ জুলাই সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২৬, ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২০, ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-০৩, ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২।

অন্যদিকে নেজাম উদ্দিন এর বিরুদ্ধে একটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সেটি ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-৬।

নেজামের সহযোগী পলাতক অস্ত্রধারী মো. আলমগীরের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে— ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-১২, ২০১৮ সালের ২ মে সিএমপির পাঁচলাইশ মডেল থানার এফআইআর নং-৩/৯২, ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-১১, ২০১৪ সালের ২৩ মে সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-৩৩, ২০২৩ সালের ২২ জুলাই সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২৬।

পলাতক অস্ত্রধারী মো. ফরহাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো হচ্ছে— ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-৯, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-১, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং ২২, ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-৬।

চিহ্নিত সন্ত্রাসী মো. ফারুক প্রকাশ কালা ফারুকের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে একটি মামলার তথ্য মিলেছে। সেটি হচ্ছে— ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-১১। আরেক অস্ত্রধারী সাইফুদ্দীন প্রকাশ সাবুর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দুটি মামলার তথ্য মিলেছে। সেগুলো হচ্ছে— ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২৮/৩০৭ এবং ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সাতকানিয়া থানার এফআইআর নং-২৪।

যা ঘটেছিল সোমবার রাতে

সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষুব্ধ জনতা নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে পিটিয়ে মেরে ফেলে। দলীয় পদবি না থাকলেও নিহত দুজনই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ‘নেতা’ হিসেবে পরিচিত। ঘটনার সময় তাদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ সবাইকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরেনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তারাবি নামাজের পর রাত ৯টার দিকে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতা নেজাম উদ্দিন এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় যান। মোট নয়টি সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও একটি মোটরসাইকেলে করে তারা সেখানে যান। গাড়িগুলো থেকে নেমে হেঁটে অস্ত্রধারীদের দলটি কাছের একটি জায়গায় অবস্থান নেয়। এলাকাবাসী তাদের তৎপরতা টের পাওয়ার পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে ‘ডাকাত আসছে ডাকাত আসছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বারবার। এর একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে নেজাম ও তার সহযোগীদের ঘিরে ফেলে। এ সময় নেজামের সহযোগীরা জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এভাবে প্রায় আধঘন্টা ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। এ সময় পুরো ছনখোলা এলাকায় অবর্ণনীয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও অবস্থা বেগতিক দেখে নেজাম ও তার সহযোগীরা অদূরে রাখা তাদের গাড়িগুলোর দিকে এগোতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যেই আরও শক্তি সঞ্চয় করে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ এলাকাবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে নেজাম ও তার সহযোগী আবু ছালেকসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। ক্ষুব্ধ জনতার মারধরে নেজাম ও আবু ছালেক ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরও অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হলেও ইকবাল ও ওবায়দুল হক নামের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত আরও যে তিনজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন আব্বাস উদ্দিন, মামুনুর রশিদ ও নাসির উদ্দিন। তাদের কারও বুকে, কারও হাতে আবার কারও পায়েও গুলি লেগেছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা নেজাম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে নেজাম ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতী, আমিলাইশসহ আশেপাশের এলাকাবাসী অতিষ্ট ছিল। তারা চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হওয়ায় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলতো বলে অনেকের অভিযোগ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm