গণপিটুনিতে নিহত দুই কর্মীর ওপর ক্ষোভ ছিল জামায়াতেও, জানাজায় যাননি বড় নেতারা

‘কর্মী’ স্বীকারে রাজি ছিলেন না বেশিরভাগ নেতাই

দফায় দফায় বৈঠকে মত-ভিন্নমত আসার পর শেষমেশ সাতকানিয়ায় গণপিটুনিতে নিহত নেজাম ও আবু ছালেককে দলের ‘কর্মী’ হিসেবে স্বীকার করে নেয় জামায়াতে ইসলামী। ঘটনার পর দক্ষিণ জেলা জামায়াতের নেতারা নিহত দুজনের অপকর্মের দায় নিতে চাননি। সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের নেতারাও তাদের ‘কর্মী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি ছিলেন না। তবে শেষমেশ প্রভাবশালী এক নেতার চাপে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াত গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নেজাম ও ছালেক দুজনকেই নিজেদের ‘কর্মী’ হিসেবে স্বীকার করে নেয়। তবে তাদের জানাজায় যাননি জামায়াতের বড় নেতাদের কেউই।

‘কর্মী’ স্বীকারে রাজি ছিলেন না বেশিরভাগ নেতাই

জানা গেছে, আগের রাতে গণপিটুনিতে দলের দুই কর্মী নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল থেকে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন জামায়াত নেতারা। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের পাশাপাশি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার নেতারাও অনানুষ্ঠানিক ওই আলোচনায় অংশ নেন।

এমন সব বৈঠকের সঙ্গে জড়িত এক জামায়াত নেতা বলেন, চট্টগ্রামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই নেজাম ও আবু ছালেককে দলের ‘কর্মী’ হিসেবে স্বীকার করতে রাজি ছিলেন না। তারা যুক্তি দেখান, নেজাম ও ছালেককে কর্মী হিসেবে স্বীকার করে নিলে তাদের অপকর্মের দায়ভারও দলকে নিতে হবে। সামনে নির্বাচনের মাঠেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী নেতাদের যুক্তি ছিল, নেজাম ও ছালেক তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছেন। এখন তাদের কর্মী হিসেবে দাবি করা হলেও তাতে ক্ষতির কিছু নেই।

জানা গেছে, মূলত চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর চাপে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াত শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে নেজাম ও ছালেক দুজনকেই নিজেদের ‘কর্মী’ হিসেবে স্বীকার করে নেয়।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘নিহত ব্যক্তিরা জামায়াতের তালিকাভুক্ত কোনো কর্মী নন।’ কিন্তু বিকেলেই তিনি ওই বক্তব্য থেকে সরে এসে নেজাম ও ছালেককে জামায়াতের কর্মী উল্লেখ করে গণমাধ্যমে লিখিত বিবৃতি পাঠান।

হতবিহ্বল হয়ে পড়েন শাহজাহান চৌধুরী

সোমবার (৩ মার্চ) রাতে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী তারাবির নামাজ পড়েন নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে। সেখানে কাঞ্চনা ইউনিয়নের কয়েকজন জামায়াত নেতা তারাবি নামাজের পর শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মসজিদের খতিবের কক্ষে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে জামায়াত নেতারা কাঞ্চনা-এওচিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় নেজাম উদ্দিন ও তার অনুসারীদের বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। শাহজাহান চৌধুরীকে তারা নেজামের লাগাম টেনে ধরার অনুরোধ জানান। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা বলেন, নেজামের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শাহজাহান চৌধুরী এ সময় বিষয়টি দেখবেন— এমন আশ্বাস দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তার মোবাইলে একটি কল আসে। সেই ফোনকলে জানানো হয়, নেজাম ও ছালেককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত একজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, শাহজাহান চৌধুরী এ সময় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন।

ক্ষুব্ধ ছিলেন জামায়াত নেতাকর্মীরাও

জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নেজাম ও ছালেকের নানা অপকর্মে সাধারণ মানুষ তো বটেই, জামায়াতের নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ ছিলেন।’

মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের অফিসে ডেকে নিয়ে নেজামকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল বলে ওই নেতা জানান।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত তিনটার দিকে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন এওচিয়া ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর আব্দুল্লাহর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার জন্য নেজাম ও তার অনুসারীদের দায়ী করা হয়।

২৮ জানুয়ারি রাতে মধ্য আমিলাইশ এলাকায় দুবাইপ্রবাসী জামায়াতকর্মী কামরুল হাসান মুন্নাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনার পেছনে নেজামের অনুসারী মোজাম্মেল, পেয়ারুসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিল বলে ভুক্তভোগীরা জানান। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুন্নাকে ছুরিকাঘাত পরপর স্থানীয় এলাকাবাসী নেজামের অনুসারীদের ধাওয়া করে দেশীয় অস্ত্র ও ব্যবহৃত সিএনজিসহ দুজনকে আটক করে। অথচ এ ঘটনায় প্রভাবশালী এক জামায়াত নেতার প্রভাব খাটিয়ে ছুরিকাহত মুন্নাসহ অন্যদের আসামি করে মামলা করে হামলাকারীরাই।

নেজাম-রিফাতের পাল্টাপাল্টি

গত কয়েক মাস ধরে মধ্যম কাঞ্চনার ‘নিয়ন্ত্রক’ জামায়াতের রিফাতের সঙ্গে নেজামের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। রিফাত অভিযোগ করেন, গত বছরের ২১ অক্টোবর ও ২৯ অক্টোবর দুই দফায় তার ওপর হামলা ও পায়ে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা হয়। এসব ঘটনায় গত বছরের ৭ নভেম্বর এওচিয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মাবুদ ও নেজাম উদ্দিনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় মামলা করেন রিফাতের ভাই ইউছুফ।

এদিকে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে নেজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির ইন্ধনে আওয়ামী ক্যাডার পিচ্চি মিজানকে সাথে নিয়ে বাবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রিফাত আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গত জুমাবার (১০ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক ২ ঘটিকায় আমার ওপর সশস্ত্র হামলা করেছিল। আমি ওইদিন আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর প্রোগ্রাম শেষে সিএনজিযোগে বাড়ি ফেরার পথে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে গুলি আমার গায়ে না পড়ে আমার পাশে বসা এরশাদ মোহাম্মদ ভাইয়ের গায়ে লাগে। প্রিয় ভাই এখন ৫টি গুলি খেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তেছে। মৃত্যুর পরোয়া আমি করি না, আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা শহীদ বশর অনেক আগেই এই দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমিও প্রস্তুত আছি ইনশাআল্লাহ। তবুও এই কাঞ্চনায় জামায়াতে ইসলামীর হুমকি হয়ে দাড়ানো কোন সন্ত্রাসীকে আমি ছাড় দেবো না। বাঁচি আর মরি।’

বহনকারী সিএনজি লক্ষ্য করে গুলির এই ঘটনায় নেজাম পরে রিফাত, মিজানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

জানাজায় যাননি জামায়াতের বড় নেতারা

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ফুলতলায় আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেকের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতে উপস্থিত ছিলেন না চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী। দক্ষিণ জেলা জামায়াতের কোনো নেতাও সেখানে ছিলেন না। এমনকি সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কামাল উদ্দিনকেও দেখা যায়নি। জানাজার নামাজে শুধু উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাস্টার আবদুস সোবহান, সাবেক আমির ডা. নুরুল হক এবং উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি তারেক হোছাঈনকে অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে বিপুলসংখ্যক এলাকাবাসী নামাজে অংশ নেন।

ছালেক কি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন?

গণপিটুনিতে নিহত আবু ছালেককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুক্ত ছিলেন— এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হলেও তিনি আন্দোলনের কোনো পর্যায়ে জড়িত ছিলেন— এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বা সাতকানিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি বা বক্তব্য দেননি। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে তাকে ‘কর্মী’ বলে উল্লেখ করা হলেও সেখানে আন্দোলনের বিষয়ে কিছু দাবি করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে আবু ছালেককে অংশ নিতে দেখা গেলেও সেটি ছিল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পরের।

বিভ্রান্তিকর সংবাদে জামায়াতের প্রতিবাদ

সাতকানিয়া উপজেলার ছনখোলা গ্রামের দুজন জামায়াত কর্মীর হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোছাঈন, এওচিয়া জামায়াতের আমির আবু বক্কর ও সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন, কাঞ্চনা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু তাহের ও সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন।

গণপিটুনিতে নিহত নেজাম ও আবু ছালেকের মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে জামায়াত নেতারা বলেন, ‘এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রাম এটি বহু আগে থেকেই সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিক চেয়ারম্যান ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা সমুহ নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।  এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিস্ট হয়ে তাকে বয়কট করে।তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদি হাসিনার পতনের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী এখনো থেকে যায়। তার ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীগণ এখনও নানা অপকর্মে জড়িত। গত রাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত ও ব্যবসায়ী জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিন  ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে মূলত গণপিটুনির নামে চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাইদের পরিকল্পনায় কুপিয়ে দুজনকে জঘন্যতম কায়দায় হত্যা করেছে— যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন।’

এর আগে ‘একইভাবে ২০১৬ সালে মানিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কাঞ্চনার জামায়াত কর্মী শহীদ বশরকেও নির্মমভাবে ছনখোলাতে হত্যা করা হয়েছিল’ উল্লেখ করে জামায়াত নেতারা বলেন, ‘অবিলম্বে চিহ্নিত খুনিদের গ্রেফতার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃস্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তারা।

যা ঘটেছিল সোমবার রাতে

সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা ১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষুব্ধ জনতা নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে পিটিয়ে মেরে ফেলে। দলীয় পদবি না থাকলেও নিহত দুজনই এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর ‘নেতা’ হিসেবে পরিচিত। ঘটনার সময় তাদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা প্রায় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এতে অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ সবাইকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরেনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, তারাবি নামাজের পর রাত ৯টার দিকে অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জামায়াত নেতা নেজাম উদ্দিন এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় যান। মোট নয়টি সিএনজিচালিত ট্যাক্সি ও একটি মোটরসাইকেলে করে তারা সেখানে যান। গাড়িগুলো থেকে নেমে হেঁটে অস্ত্রধারীদের দলটি কাছের একটি জায়গায় অবস্থান নেয়। এলাকাবাসী তাদের তৎপরতা টের পাওয়ার পর স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকে ‘ডাকাত আসছে ডাকাত আসছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বারবার। এর একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে নেজাম ও তার সহযোগীদের ঘিরে ফেলে। এ সময় নেজামের সহযোগীরা জনতাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। এভাবে প্রায় আধঘন্টা ধরে গোলাগুলি চলতে থাকে। স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সময় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। এ সময় পুরো ছনখোলা এলাকায় অবর্ণনীয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপরও অবস্থা বেগতিক দেখে নেজাম ও তার সহযোগীরা অদূরে রাখা তাদের গাড়িগুলোর দিকে এগোতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যেই আরও শক্তি সঞ্চয় করে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ এলাকাবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে নেজাম ও তার সহযোগী আবু সালেহসহ আরও কয়েকজনকে ধরে ফেলে। ক্ষুব্ধ জনতার মারধরে নেজাম ও আবু সালেহ ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ ঘটনায় আরও অন্তত পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হলেও ইকবাল ও ওবায়দুল হক নামের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। এছাড়া আহত আরও যে তিনজনের নাম জানা গেছে, তারা হলেন আব্বাস উদ্দিন, মামুনুর রশিদ ও নাসির উদ্দিন। তাদের কারও বুকে, কারও হাতে আবার কারও পায়েও গুলি লেগেছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা নেজাম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে নেজাম ও তার বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতী, আমিলাইশসহ আশেপাশের এলাকাবাসী অতিষ্ট ছিল। তারা চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হওয়ায় পুলিশও তাদের সমীহ করে চলতো বলে অনেকের অভিযোগ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm