চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের ভবন নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। এছাড়া পাহাড় কাটতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নেওয়ার বিষয়ে ভুল স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক।
বুধবার (৮ জানুয়ারি)) সকালে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে প্রকল্পটির অগ্রগতি ও পাহাড় কাটা বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দীন। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
জানা গেছে, চট্টেশ্বরী সড়কের গোয়াছিবাগান এলাকার পাহাড়ে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনুমতি চেয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার আগেই তারা পাহাড় কাটা শুরু করে। পরে বিষয়টি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নজরে আসে।
এদিকে প্রকল্পের ভূমিধস এড়াতে পাহাড়ের কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে বলে দাবি করেন হাসপাতালের পরিচালক।
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দীন জানান, আমরা পরিবেশে অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবো। ছাড়পত্র পেলে সে অনুযায়ী কাজ করবো। ভৌত অবকাঠামোগত কাজ করার আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ঢালু আকারে কেটে এতে চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে পাহাড়ধসের শঙ্কা কমে আসবে। যে জায়গায় পাইলিং করা হবে সেখানে উন্নতমানে ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়।
তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২ বছর। কিন্তু চীনের প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ের আগে এ কাজ শেষ করে ফেলতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের চীনের প্রতিনিধি দলেন প্রধান মে ইইউ চ্যং বলেন, পাহাড়টা দেখার পর মনে হয়েছে, পাশে ভবন হলে জায়গাটি নিরাপদ হবে না। কারণ ভবনে বেইজ করার সময় পাহাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাহাড়ের মাটিগুলো খুবই নরম। পানির স্পর্শ পেলে নিচের দিকে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৌশলীরা সয়েল নেইলিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়টি ড্রেসিং করে কলাম বসিয়ে কাজ করবে এবং সেখানে ঘাস রোপণ করা হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড কর্মকর্তা ফারমিন এলাহী বলেন, গত বছরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। তখন তারা বলেছিলেন, পাহাড় রক্ষা করে কাজ করবেন। আজ আবার তারা বলছেন, পাহাড় ধসে পড়ার কারণে তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছেন। যেকোনও প্রকল্প করতে হলে পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা (ইআইএ) করতে হয়। কিন্তু ইআইএ না থাকায় আমরা অবাক হয়েছি। চট্টগ্রাম মেডিকেলের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের অবহেলা আশা করা যায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ রাখা হয়েছে, সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সঙ্গে দেশীয় প্রজাতির গাছও লাগাতে হবে।
তবে সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চায়না এইড প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই বার্ন ইউনিটে থাকছে ১৫০ শয্যার হাসপাতাল যেখানে থাকবে ১০টি আইসিইউ, ২৫টি এইচডিএউ ও ৩টি অপারেশন থিয়েটার।
আইএমই/ডিজে