চবি ছাত্রীকে কুতুবদিয়ায় অকথ্য নির্যাতন ইউপি চেয়ারম্যানের, মামলায় গেলে হত্যার হুমকি

0

‘প্রকাশ্য সড়কে দলবল নিয়ে আক্রমণ করে ও প্রকাশ্য সড়কে গুরুতরভাবে জখম করে সড়কে ফেলে যায় এবং পাহারা বসায় যাতে হাসপাতালে না পৌঁছাতে পারি। মৃত্যুভয় ও আতংকে হাসপাতালে যাওয়ার সাহসও পাচ্ছিলাম না। এলাকার একজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে আরও কয়েক ঘণ্টা পর উল্টোপথে হাসপাতালে পৌঁছি’— বলছিলেন কুতবদিয়ার এক চেয়ারম্যানের হামলার শিকার হওয়া নারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করা তানজিনা সুলতানা সুমি।

ঘটনাটি গত ২৯ ডিসেম্বরের। এজাহারে আনা অভিযোগ অনুসারে কুতুবদিয়ার আলি আকবর ডেইলের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শিকদারের নেতৃত্বে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর অন্তত ২০-৩০ জনের একটি দল আক্রমণ করে হত্যা চেষ্টা চালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে সদ্য পাশ করা তানজিনা সুলতানা সুমিকে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শিকদার তাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে বলে জানান ভিকটিম নারী তানজিনা সুলতানা সুমি।

সুমি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার পৈত্রিক জমি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর অবৈধভাবে দখল করতে চেয়েছিল। আমি বাধা দেওয়ায় তিনি আমাকে হত্যা করার চেষ্টা চালান। ঘটনার দিন ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশ্য স্থানে আমাকে মারধর করে গুরুতর জখম করে ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।’

ভিকটিম সুমি বলেন, ‘ওড়নায় ফাঁস দিয়ে রেখেছিল ওরা। আমার শ্বাসনালী থেঁতলে গিয়েছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রায় কয়েকঘণ্টা সড়কে পড়ে থাকলেও চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের ভয়ে আমাকে কেউ উদ্ধার করতে আসেনি। আমাকে হাসপাতালে যেতেও বাধা দেয় তারা। এ ঘটনার পর ডাক্তারি সনদ নিয়ে অভিযোগ করলেও থানা মামলা না নিলে আদালতের দ্বারস্থ হই আমি। মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যান আরও ক্ষেপে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে ও বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে।’

তানজিনা বলেন, ‘আমার পৈত্রিক জমির আশপাশের কিছু জমি কিনে নেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর। কিন্তু আমার বাবাসহ দুজন নিজেদের অংশ তিনি বিক্রি করতে চাননি। বাবার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ভেবেছিলেন আমি মেয়ে, তাই তার সাথে পেরে উঠব না। আমাকে পৈত্রিক জমি থেকে উৎখাত করতে একটি ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি করে। তাতে একজন ওয়ারিশকে বাদ দেওয়া হয় যাতে চেয়ারম্যান যাদের অংশ কিনেছেন সেটার পরিমাণ বেড়ে যায়।’

তানজিনা বলেন, ‘ওই ওয়ারিশ সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। হত্যা চেষ্টার পর চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আমাকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।’

তানজিনা বলেন, ‘পুলিশের সাহায্য আমি কীভাবে আশা করব বলেন? আমাদের এলাকাগুলোতে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে জনপ্রতিনিধিরা। আমি অনেক বেশি জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। কারণ যেদিন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় সড়কে ফেলে যায় সেদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ আসলেও আমাকে তারা উদ্ধার করেনি বা হাসপাতালে নেয়নি। এমনকিথানায় মামলা দায়ের করতে গেলেও তারা ফিরিয়ে দিয়েছে।’

তানজিনা আরও বলেন, ‘আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষীরা থানায় গেলে তদন্তকারী অফিসার সাক্ষীদের বক্তব্য রেকর্ড করছেন না। তিনি মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুতুবদিয়া থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত অফিসার) মোহাম্মদ ওমর হায়দার বলেন, ‘দেখুন এ ঘটনাটিতে উভয়পক্ষই পুলিশকে দুষছে। একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এখন তদন্ত হচ্ছে। আমরা সাধ্যমত করছি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে। তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা তো করতে হবে।’

খোদাইজাতুল আবরার নামে ওই এলাকার স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘আমি কুতুবদিয়ার জমজম এলাকায় আমার মেয়েকে নিয়ে গেছি একটা দরখাস্ত লেখাতে। ওই ভবনের দোতলায় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ছিল। আমার সামনে সুমিকে ডাকছে। সুমি ওখানে গেলেই সুমির ওড়না ধরে টান দেয় ও গলায় পেচিয়ে ফেলে। ওরা অনেকজন ছিল ওদের হাতে মাস্তুল দড়িসহ নানারকমের অস্ত্র ছিল। সুমিকে সবাই মিলে এলোপাথাড়ি মারধর করে। তবে জাহাঙ্গীর প্রথমে আঘাত করে। একটা মেয়েকে কীভাবে আক্রমণ করে বলার মত না। এটা সবাই দেখছে। অনেক লোকজন ছিল। অনেকে দেখছে। তবে চেয়ারম্যানের ভয়ে অনেকে কথা বলছে না।’

খোদাইজাতুল আরও বলেন, ‘সুমিরা তো সবাই শহরে থাকত বুঝছেন। চেয়ারম্যানে ওদেরকে জমি বিক্রি করে চলে যেতে বলছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি বলেন, ‘আমি কীভাবে বলব বলেন, মেয়েটাকে বেশি নির্যাতন করছে। বলার মত না। মেয়েটার আব্বা মারা গেছে ছয় মাস আগে। মেয়েটা ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়ে একটা মামলা করছে। চেয়ারম্যান ক্ষেপে গিয়ে মেয়েটারে অসম্ভব নির্যাতন করছে। একবার দুইতলায়, একবার একতলায়। সবাই দেখছে। বলার মত না এগুলো। এখানে আমরা সবাই চেয়ারম্যানের ভয়ে থাকি।’

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘আমি আপনাকে বলি এটা পুরোটা মিথ্যা কথা। আমার সাথে ওনার কোন ঘটনা হয় নাই। আমার সাথে ঘটনা এলাকার শাজাহানের সাথে।’

এই প্রতিবেদক নারীর আহত হওয়ার কথা উল্লেখ করলে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘শোনেন, আমি বলি আমি ওসি সাবরেও বলছি মেয়েটার কোন ইনজুরি হয় নাই। ওই মেয়েটার ওপর আমি কোন একবারও হাত লারি নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি আপনারে বলি, কথাটা বুঝেন, ওই মেয়েটাই আমারে হামলা করছে। গলাতে কোন ইনজুরি হয় নাই। আপনি ওসি সাবরে জিজ্ঞেস করেন। এলাকার অন্য সাংবাদিকরে জিজ্ঞেস করেন। ওই মেয়েটার সাথে আমার কোন লেনদেন নাই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm