s alam cement
আক্রান্ত
৪৬৬৮২
সুস্থ
৩৫২১৬
মৃত্যু
৪৫২

চমেক হাসপাতালের বর্জ্যের দুর্গন্ধে টেকা দায়—২ যুগেও চালু হয়নি ইনসাইনেরেটর মেশিন

0

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসে ৭ কোটি টাকায় প্রায় দুই যুগ আগে কেনা দুটি ইনসাইনেরেটর মেশিনের কোনো গতি হয়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে এ দুটি মেশিনের কার্যক্রম শুরুর আনুষ্ঠানকিতা। আদৌ মেশিন দুটি ব্যবহার সম্ভব কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এ মেশিন ব্যবহার করতে না পারায় এখনো সনাতনী পদ্ধতিতেই চলছে চমেক হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ফলে সারা বছরের মতো এ রমজানেও হাসপাতালে রোগী আর বর্জ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বর্জ্যের দুর্গন্ধে রোগী, রোগীর সাথে থাকা লোকসহ সবার টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ইফতারের ছুঁতোয় বেলা দেড়টার পরেই বাসায় চলে যায়। ফলে কোনোভাবেই হচ্ছে না হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে কোটি টাকায় কেনা বর্জ্য ধ্বংসের জন্য দুটি ইনসাইনেরেটর মেশিন কেনা হলেও তা ব্যবহার হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়ায়। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের পেছনে এটির স্থাপনাগার নির্মাণ করা হলেও তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে থাকতে মেশিনটি হয়ে গেছে পরিত্যক্ত। যার ফলে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য অপসারণে সৃষ্ট ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল অবস্থা লেগে আছে দুই যুগের কাছাকাছি সময়।

১০১০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪টি ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ২ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকে। ইনডোর ও আউটডোরের এসব ওয়ার্ডে রোগীর ব্যবহার্য ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ও ক্লিনিক্যাল সরঞ্জামাদিসহ বিভিন্ন ময়লা আবর্জনার বর্জ্য থাকে। মেডিকেলের ৫ ধরনের বর্জ্যের মধ্যে হাসপাতালে বিশেষ করে ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ও সাধারন বর্জ্য থাকে। এর মধ্যে সাধারন বর্জ্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাহিরে অপসারণ করা হয়। কিন্তু ক্লিনিক্যাল বর্জ্য হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ড্রেনসহ আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভিতরে ক্লিনাররা ক্লিনিক্যাল বর্জ্যগুলো আয়া, ওয়ার্ডবয়দের ম্যানেজ করে ব্যাগ ভর্তি করে বাইরে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এ ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ধ্বংসের জন্য পুরোনো নিম্নমানের ইনসাইনেরেটর মেশিন ক্রয় করা হলেও তা চালু করা যায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এটি স্থাপনের সাথে গ্যাস সংযোগ দিতে হয়েছিলো।

অভিযোগ আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া, গ্যাসের সংযোগ বিল সরকার না হাসপাতাল দিবে এ সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মেশিনটি চালু করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের ৩টি মেডিসিন ওয়ার্ডসহ মডেল ৫টি ওয়ার্ডেই ক্লিনিক্যাল বর্জ্য ফেলা হয়ে থাকে যত্রতত্র। ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ড মডেল ওয়ার্ডগুলোর একটি হলেও এখানেই অব্যবস্থাপনা বেশি। গাইনি ওয়ার্ডে লেবার রুমের পাশের বারান্দায় প্রসুতির প্ল্যাসেন্টা, কাপড়চোপড় জমা করে রাখা হয়। মৃত জন্ম নেয়া শিশুগুলো ও ফেলে রাখা হয় নোংরা বালতির মধ্যে। এ বর্জ্যগুলো ২ থেকে তিনদিন নোংরা বালতির মধ্যে ফেলে রাখে আয়ারা।

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলছেন, ইনসাইনেরেটর মেশিন চালু না হওয়ার অজুহাতে বছরের পর বছর বর্জ্য নিয়ে বিপদজনক ক্ষেত্র তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। কোন কোন চিকিৎসক বলছেন, চোখের সামনে সাধারন বর্জ্য সুঁচ, সিরিঞ্জ কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে টোকাইরা। ওয়ার্ডবয়দের কেউ কেউ এসব বিক্রি করে দিচ্ছেন বাইরে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ ধরনের বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এদের মধ্যে ভয়ানক হচ্ছে সংক্রামক বর্জ্য।

Din Mohammed Convention Hall

এগুলো হচ্ছে: রক্ত, পুঁজ, দেহরস দ্বারা সংক্রমিত গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, স্পঞ্জ, প্লাস্টার, ক্যাথিটার, ড্রেনেজ টিউব, রক্ত সঞ্চালনের ব্যাগ-টিউব, রক্ত দ্বারা সংক্রমিত স্যালাইন সেট, জমাট বাঁধা রক্ত বা দেহরস ইত্যাদি। এছাড়া একই ধরনের ভয়াবহ এনাটমিক্যাল বর্জ্য মানবদেহের কেটে ফেলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, টিস্যু, টিউমার, গর্ভফুল বা গর্ভসংক্রান্ত বর্জ্য। তেজস্ক্রিয়া বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে, রেডি-অ্যাকটিভ আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয়া, বস্তু দ্বারা সংক্রমিত সব বর্জ্য, অব্যবহৃত এক্স-রে মেশিনের হেড ইত্যাদি। এসব বর্জ্য নিয়ম অনুযায়ী বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে ইনসিনারেটর মেশিনে বিনষ্ট ও শোধন করার নিয়ম রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে দুটি পরিত্যক্ত ইনসাইনেরেটর মেশিন আছে। যতদুর জানি দুই যুগের কাছাকাছি সময় মেশিনগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। আমরা বেসরকারিভাবে একটি সেবা সংস্থা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করাচ্ছি। কিন্তু কাজগুলোতে সমন্বয় থাকছে না। তবে প্রায় ৭ কোটি টাকায় কেনা ইনসাইনেরেটর মেশিনগুলো সচল থাকলে হাসপাতালে রোগি আর বর্জ্যে গড়াগড়ি করত না।

কেএস

ManaratResponsive

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm