রমজান এলেই বেড়ে যায় ভেজাল ঘি তৈরির ধুম। বাড়তি চাহিদার সুযোগে নানা ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়েই তৈরি করা হয় এসব ঘি। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে সুন্দর মোড়কে, বাহারি নামে এসব ঘি দেদার বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব ভেজাল ঘি খেয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি ভেজাল ঘিতে ভরে গেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারার বিভিন্ন হাটবাজার।
বুধবার (২০ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আমান উল্লাহ্ পাড়া এলাকায় এমএস ঘি নামে ভেজাল ঘি তৈরির একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হাসান চৌধুরী।
এ সময় ভেজাল ঘিয়ের কৌটা, পাম অয়েল ও ক্ষতিকারক রংসহ ঘি তৈরির নানা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নামি-দামি কোম্পানির মোড়ক লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করে আসছিল ভেজাল ঘি তৈরির একটি চক্র। এতে ঘিয়ের কোন উপাদান থাকা সত্ত্বেও ‘খাঁটি গাওয়া ঘি’ এর নামে ঘিয়ের ফ্লেবার মিশিয়ে বাজারজাত করছিল কিছু অসাধূ ব্যবসায়ী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তানভীর হাসান চৌধুরী।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার, বটতলী রুস্তমহাট, বন্দর কমিউনিটি সেন্টার, ভিংরোল ছত্তারহাট, মালঘর বাজার ও আনোয়ারা সদরের জয়কালী হাটসহ বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ দোকানে খুচরা ও পাইকারি দরে ভেজাল ঘি বিক্রি হচ্ছে। এসব ভেজাল ঘিয়ের মধ্যে বিন্টু ঘি, বাঘা বাড়ি ঘি, থ্রি স্টার ঘি, রূপসা ঘি, কর্ণফুলী ঘি, এসপি ঘি, ভিআইপি ঘি, ডানুফা ঘি, এ সেভেন, কুক-মি ঘি, শাহি স্পেশাল গাওয়া ঘিসহ অন্তত ২০টি ভুঁইফোড় ও অবৈধ কোম্পানির ঘি রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেজাল ঘি তৈরির এক কারিগর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট কারাখানা বসিয়ে ভেজাল ঘি বানানো হয়। সাধারণত প্রতিটি কৌটায় ৯০০ গ্রাম ঘি থাকে। এ পরিমাণ ঘি তৈরিতে ৬০০ গ্রাম পাম ওয়েল, ২০০ গ্রাম ডালডা ও ১০০ গ্রাম খাঁটি ঘি দেওয়া হয়। এ মিশ্রণে সামান্য পরিমাণে রঙ ব্যবহার করা হয়।
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মো. সাইফউদ্দীন বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্যে মিশ্রণের খুব ভালো রঙ হলেও দুই মাস পর কার্যকারিতা হারিয়ে বিষাক্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু ভেজাল ঘি তৈরি হচ্ছে, তাতে ভালো রঙ মেশানোর প্রশ্নই আসে না। এসব ভেজাল ঘি খেয়ে পেটের অসুখ থেকে শুরু করে যকৃতের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিএসটিআই দপ্তরের আনোয়ারার মাঠকর্মী আবদুল মন্নান বলেন, কিছু ভুঁইফোড় অসাধু ব্যবসায়ী আড়ালে থেকে এসব ঘি তৈরি করে বাজারজাত করছে। এর আগে একাধিকবার এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, মোড়কে ৯৯.৮০% মিল্ক ফ্যাট ঘোষণা করে আসল ঘি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি হাজার টাকা কিংবা আরও বেশি দামে। বাবুর্চির সাথে চুক্তি করে এসব ভেজাল ঘি যাচ্ছে কমিনিউটি সেন্টারের বিয়ে কিংবা বড় কোনো প্রোগ্রামে। মূলত বানানো হচ্ছে তেল, ডালডা, খাবার রং এবং আরও অন্যান্য খাবার অযোগ্য জিনিস দিয়ে।
এসএ