টেন্ডার চলাকালেই চাক্তাই ঘাট দখলে নিয়ে বিএনপি নেতাদের ব্যানার, খাস কালেকশন নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন
দখলে যুক্ত সকলেই মেয়র শাহাদাতের অনুসারী
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাছবাজার এলাকার চাক্তাই খালের ঘাট ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক ও রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই ঘাট দখল করে সেখানে নিজেদের ‘ইজারাদার’ দাবি করে ব্যানার টাঙিয়েছেন দুই বিএনপি নেতা। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলছে, তারা কেবলমাত্র ‘খাস আদায়কারী’ হিসেবে দায়িত্বে আছেন—ইজারাদার নন।
ঘটনাস্থলে স্থাপন করা ব্যানারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি স্মারক নম্বর উল্লেখ করে লেখা রয়েছে, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ইজারাকৃত।’ ব্যানারে রয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী আছু এবং বিএনপির দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি নবাব খানের ছবি। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের ছবিও রয়েছে এক কোণায়।
ইজারার আগেই ব্যানার!
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দের অবশিষ্ট সময়ের জন্য নগরীর পাঁচটি ফেরিঘাট ও ফিশারি ঘাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ১৬ এপ্রিল। যার দরপত্র ফরম সংগ্রহের শেষ সময় ২৯ এপ্রিল এবং দাখিলের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল। অথচ এর আগেই চাক্তাই খালের নতুন মাছবাজার এলাকায় বিএনপি নেতা দুজন তাদের নামসহ সিটি করপোরেশনের ব্যানার টাঙিয়ে ঘাট থেকে রাজস্ব আদায় শুরু করেন।
মেয়রের ‘মৌখিক নির্দেশে’ ঘাট দখলের অভিযোগ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, ‘তারা কেবল খাস আদায়কারীর দায়িত্বে আছেন, ইজারাদার নন। নিজেদের ইজারাদার বলা বা ব্যানার টাঙানো অনৈতিক। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
তবে মোহাম্মদ নবাব খান দাবি করেন, ‘আমরা দুজন মিলে গত বৈশাখে মেয়রের মৌখিক নির্দেশে ঘাট থেকে টাকা আদায় শুরু করেছি। ঠিকাদার নই, তবে সিটি করপোরেশনের ব্যানারে স্মারক নম্বরসহ নাম ও ছবি দিয়েছি।’
তবে তিনি এটিও স্বীকার করেন, “সাইনবোর্ডে ঠিকাদার উল্লেখ করা ও স্মারক নম্বর ব্যবহার করাটা ভুল হয়েছে।’
রাজস্ব ফাঁকি ও রাজনৈতিক প্রভাব
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঘাটটি ঘিরে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেট ও সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সমন্বয়ে ‘খাস কালেকশন’-এর আড়ালে চলছে চাঁদাবাজি ও রাজস্ব ফাঁকি। এতে করে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ইজারা কম দামে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যা বড় দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, পান দোকান, ট্রলার, এমনকি মাছের গাড়ি থেকেও নিয়মিত বড় অংকের চাঁদাবাজি চলছে।
ঘাট দখলের পেছনে কারা?
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ঘাট দখলে যুক্ত ব্যক্তিরা সবাই বিএনপির লোক—যারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই নেতার নামে সাইনবোর্ড থাকলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ ও যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশার অনুসারীরা।
মেয়র ‘নীরব’
এই বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ফোন রিসিভ করেননি। এ নিয়ে শহরজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি এই ঘটনায় জড়িত কি না কিংবা তার মৌখিক নির্দেশেই কি ঘাট দখল হয়েছে?
ফিশারীঘাট নিয়ে অনিয়ম দীর্ঘদিনের
দীর্ঘদিন ধরে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ফেরিঘাটগুলোর ইজারা নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম চলছিল। গত বছর হাইকোর্টের এক রিট মামলার কারণে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত থাকায় খাস আদায়ের আওতায় এনে রাজস্ব আদায় করছিল সিটি করপোরেশন। এ সুযোগেই কিছু অসৎ কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘাট নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইজারার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এখনই কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে থাকলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং প্রশাসনিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’
সিপি