সমালোচনার মুখে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) ওয়াগন থেকে তেল চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) এক হাবিলদারের বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছে। এর আগে অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সিজিপিওয়াই থেকে আখাউড়া বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির দেড় মাসের মাথায় সেই হাবিলদার আবারও চট্টগ্রামে চলে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে তিনি বদলি হন।
অভিযুক্ত ওই আরএনবি হাবিলদারের নাম জসিম উদ্দিন সরকার। তিনি বর্তমানে আখাউড়ায় কর্মরত আছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জসিমের বদলির আদেশ পরিবর্তন করা হয়। এর আগে ২৭ এপ্রিল আখাউড়া থেকে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে বদলি করা হয়। অথচ তেল চুরিতে অভিযুক্ত হওয়ার গত ১১ মার্চ জসিমকে সিজিপিওয়াই থেকে আখাউড়া বদলি করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডে (সিজিপিওয়াই) চারজন লোক একটি ওয়াগন থেকে গ্যালনে তেল চুরি করে, তা পাশের ঝোপে মজুদ করার দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। এই চারজন হলেন আরএনবির সিপাহী মাহমুদুল হাসান, সিপাহী শহীদুল ইসলাম, হাবিলদার আমিনুল হক ও সিপাহী মো. কাউসার। তেল চুরির ঘটনা চাউর হলে বিষয়টি অন্যের ঘাড়ে চাপাতে নাটক সাজান এই চারজন।
কর্মস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম নগরীর সল্টগোলা এলাকায় একটি ওয়াগন থেকে তেল চুরির সময় দুই চোরকে ধরা হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। যেখানে বাহিনীরই তিন সদস্যসহ পাঁচজনের নাম পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে সরাসরি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদেবার্তা পাঠান সিপাহী মাহমুদুল। সেই বার্তা রেলের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছামাত্র আরএনবির সেই তিনজনসহ ১২ জনকে তাৎক্ষণিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় গঠন হয় তদন্ত কমিটি।
তবে সেই তদন্তে বেরিয়ে আসে অভিযোগকারী চার আরএনবি সদস্যই মূলত আসল চোর। এনিয়েও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। এদিকে মার্চের শুরুতে দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চুরির ঘটনায় অভিযুক্তদের কারো শাস্তির সুপারিশ করা হয়নি। কেবল অভিযুক্ত সাত আরএনবি সদস্যকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করা হয়। এদিকে তদন্ত কমিটির সুপারিশে গত ১২ মার্চ চুরির সময়ের সিজিপিওয়াইয়ে থাকা হাবিলদার ও চুরির ঘটনার মূলহোতা মো. জসিম উদ্দিন সরকারকে আখাউড়া এবং উপদেষ্টাকে মিথ্যা ম্যাসেজ দেওয়ায় মাহমুদুল হাসানকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবিতে বদলি করা হয়। এছাড়া নায়েক ইয়াসিন আরাফাকে সিজিএমওয়াই, মো. আমিনুল হককে ঢাকা ডিজেলশপ, সিপাহী বাবলু মিয়াকে পাহাড়তলী কারখানায়, মো. শহিদুল ইসলাম ও মো. কাউছারকে কক্সবাজার বদলি করা হয়। তবে বদলির দেড় মাসের মাথায় জসিম উদ্দীন সরকার গত ২৭ এপ্রিল আখাউড়া থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামের ষোলশহর আসেন।
অভিযোগ উঠেছে, আরএনবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বদলি বাগিয়ে নেন জসিম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আরএনবি সদস্য ক্ষোভ ঝেরে বলেন, এই জসিমের বিরুদ্ধে কক্সবাজারে টিকিট কালোবাজারি, সিজিপিওয়াই তেল চুরি, বিদেশ থেকে আসা নতুন ইঞ্জিনের কেবল চুরি, ব্যাটারি চুরিসহ একাধিক অভিযোগ রযেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সুপারিশে তাকে বদলি করা হয়েছিল। তবে পরিবার থেকে দূরে হওয়ায় তাকে আবারও চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। কিন্তু তার চট্টগ্রামে বদলির বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দেয়। সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্য ও নানামুখী সমালোচনার জেরে তার বদলি অর্ডারটি মঙ্গলবার বিকালে বাতিল করা হয়েছে।
সিএম/ডিজে