দক্ষিণ চট্টগ্রামে আসছে ৫০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল, চীনের টাকায়
কর্ণফুলীর ক্রসিং মোড়ে ১০ একর জমিতে নির্মাণ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ক্রসিং মোড়ে ১০ একর জমিতে নির্মিত হতে যাচ্ছে একটি ৫০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। চীন সরকারের অর্থায়নে নির্মিতব্য এ হাসপাতাল ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলার ক্রসিং মোড় এলাকায় ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে হাসপাতালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে স্বাস্থ্যসেবা চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মহাসড়কের পাশে কর্ণফুলীর ক্রসিং মোড়কেই বেছে নেওয়া হয়েছে। একসঙ্গে ১০ একরের মতো বড় জায়গা পাওয়া এবং সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা এই স্থানকে প্রাধান্য দেওয়ার অন্যতম কারণ।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। অনেক সময় রোগীদের টয়লেটের পাশেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষিণের কর্ণফুলী এবং উত্তরের হাটহাজারীতে দুটি পৃথক হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালীসহ আশপাশের উপজেলা এবং রাঙামাটি-কাপ্তাই অঞ্চলের মানুষ এই হাসপাতাল থেকে সরাসরি উপকৃত হবেন। ভবিষ্যতে এখানে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হলেও এখানকার সীমিত সক্ষমতায় কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকার জটিল রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন, যেখানে শয্যা সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ২০০। এ অবস্থায় চাপ কমাতে সরকার বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের দীর্ঘদিনের অভাব দূর করতে উদ্যোগটি স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার পর এত বছরেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হাসপাতাল গড়ে তুলতে কোনো সরকার বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক ছিলেন না। বরং শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত ছিলেন তারা। বর্তমানে উপজেলায় বিদ্যমান ৩০-৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো প্রতিদিন অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে কার্যত অসহায়। অনেক সময় রোগীদের বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়।
এর আগে ১৬ মার্চ চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তিনি কর্ণফুলী উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিনখাইন গ্রামে ভূমিদাতা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সিপি