প্রচণ্ড গরমে আগেভাগে পাকছে বাঁশখালীর স্থানীয় জাতের কালিপুরের লিচু। রাজশাহী ও পার্বত্য চট্টগ্রামের লিচুও বাজারে এসেছে। আকারে ছোট হলেও মৌসুমের প্রথমে আসায় এ লিচুর কদর বেশি। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি এ লিচু বিক্রি হচ্ছে চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায়।
নগরের বিভিন্নস্থানে আটি বাঁধা ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুর দিকে এ লিচু বাজারে আসতেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তবে ক্রেতা চাহিদা পুঁজি করে লিচু বিক্রেতারা অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বেশি পাতায় লিচুর আঁটি বেঁধে লিচুর পরিমাণ কম দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
এ নিয়ে নগরের মুরাদপুরে কয়েকজন লিচু ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, কিছু লিচু বিক্রেতা আছে যারা যে কোনভাবে ক্রেতাকে ঠকাবেই। লিচু গুণে দিতে বললে ওরা গড়িমসি করে৷ ক্রেতা ঠকানোর জন্য লিচুর চেয়ে পাতা বেশি দিয়ে রাখে। কৌশলে বাঁধা এ লিচুর আঁটি দেখলেই মনে হবে ১০০’র বেশি লিচু হবে। কিন্তু বাস্তবতায় ভিন্ন।
আঁটি বাঁধা লিচু কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। এসব লিচুর আঁটিতে প্রায় ২০-৩০টি লিচু কম থাকে অর্থাৎ প্রতি আঁটিতে ৭০-৮০টি লিচু থাকে। লিচু কেনার সময় বিক্রেতার সাথে থাকা দালাল ক্রেতাকে এমনভাবে বিশ্বাস জমিয়ে কথা বলবে আপনি না গুণে লিচু ঘরে নিয়ে যাবেন।
‘গুণলে ১২০টির মত হবে, গুণতে হবে না বিশ্বাস করে নিয়ে যান, ঠকবেন না’ -এমন কথায় লিচু কিনে ঘরে নিয়ে গুণে দেখেন আঁটিতে লিচু ৭০-৮০টি। এমন প্রতারণা নগরের প্রায় অধিকাংশ লিচু বিক্রেতাই করছেন।
নগরের বহদ্দারহাট হাট বাজার থেকে থেকে লিচু কিনে প্রতারিত হওয়া রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, মৌসুমের শুরুতে লিচু দেখে কিনতে আগ্রহী হয়। ১০০ লিচু ৪০০ টাকায় কিনতে গিয়ে আমি আমার পছন্দের লিচুর থোকা থেকে ১০০ লিচু গুণে দিতে বলি। তখন লিচু বিক্রেতা আমাকে বলে এই থোকায় ১২০টার উপর লিচু আছে, আপনি এই থোকাটাই নিয়ে যান, গুণা লাগবে না, সময় নষ্ট। আর যদি বলেন, গুণে নেব তাহলে গুণে ১০০র বেশি লিচু পাই তাহলে অতিরিক্ত লিচুগুলো রেখে দিবো। আর ১০০র কম পেলে ১০০টি লিচু মিলিয়ে আরও ২০টি লিচু বাড়িয়ে দিবো। বিক্রেতার এমন কথায় সরল বিশ্বাসে লিচু বাসায় এনে গুণে দেখি আঁটিতে মাত্র ৭০টি লিচু রয়েছে। তার মানে আমাকে ৩০টি লিচু কম দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এটি মারাত্মক ধরনের প্রতারণা৷ আমরা নগরের বিভিন্নস্থানে লিচু বিক্রেতাদের উপর নজরদারি রাখব৷ অভিযানে কোন প্রতারণার প্রমাণ পেলে বিক্রেতাকে জরিমানা করা হবে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিক্রেতারা ক্রেতাদের নানা কৌশল ঠকাচ্ছেন। নতুন একটি ফল বাজারে এলে তা নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে যায়। তরমুজ কেজিতে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকানো হয়েছে। এবার বাজারে নতুন ফল লিচুর চাহিদাকে পুঁজি করে ক্রেতা ঠকাচ্ছে বিক্রেতারা। এ নিয়ে ক্রেতা সচেতনতা বাড়লে ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলে কমে আসতে পারে প্রতারণা।
কেএস