পটিয়ার ১৭ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন যারা

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন— এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। বুধবার (১০ নভেম্বর) চতুর্থ দফার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এখন সেই আলোচনা আরও বেড়ে গেছে। ফলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অতীতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও নানামুখী কর্মকাণ্ডসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৫ নভেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ২৯ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ৬ ডিসেম্বর। আর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক ইউনিয়নে পুরানোতেই ভরসা খুঁজছেন আর অনেক ইউনিয়নে পরির্বতনের বিকল্প খুঁজছেন ভোটাররা। আবার অনেক ইউনিয়নে নতুন চমক হিসেবে আসতে পারেন দলে ত্যাগী হিসেবে পরিচিত বেশকিছু নতুন মুখ।

আশিয়া ইউনিয়ন

আশিয়া ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ৬ জন। এর মধ্যে গেল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী চেয়ারম্যান এম এ হাসেম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। গেল নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এম এ হাসেমের এলাকায় তেমন কোনো দলীয় কর্মকান্ড কিংবা উন্নয়নমূলক কোন কাজ চোখে পড়ার মতো ছিল না। সেক্ষেত্রে কোন কারণে এম এ হাসেম দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়লে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ইমরান উদ্দিন বশির দলীয় প্রার্থী হতে পারেন। এছাড়াও রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলামুর রহমান মন্জু, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী, এম সাইফুদ্দিন ও এডভোকেট বেলাল উদ্দিন।

কাশিয়াইশ ইউনিয়ন

কাশিয়াইশ ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহির আহমেদ চৌধুরী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ কাসেম যদিও তিনি আওয়ামী লীগ ঘরানার নন। তিনি গতবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ইউনিয়নে যদি কোন ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে তাহলে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন জহির আহমেদ চৌধুরী। এছাড়াও সাবেক ছাত্রনেতা গাজী আজগরসহ এখানে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন তিনজন।

জিরি ইউনিয়ন

জিরি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আর হারুন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিমুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম টিপু এবং ফরিদুল আলমের নাম শোনা যাচ্ছে।

কুসুমপুরা ইউনিয়ন

কুসুমপুরা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এজাজ চৌধুরী, বর্তমান চেয়ারম্যান ইব্রাহিম বাচ্চু, আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া ডালিম, মোহাম্মদ এমরান মনা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হোসাইন রানা ও আবু সুফিয়ান টিপু। তবে এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এজাজ চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এটি একপ্রকার নিশ্চিত করেই বলা যায়।

কোলাগাঁও ইউনিয়ন

কোলাগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আহম্মেদ নুর, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক চৌধুরীর নাম জোরেসোরে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হারুন ও মোহাম্মদ রাসেলও রয়েছেন আলোচনায়। তবে যুবলীগ নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের হওয়া সত্ত্বেও গেল নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়া আহম্মেদ নুরকে বেগ পেতে হতে পারে। কোন কারণে তিনি যদি দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন, সেক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে— বলছেন কেউ কেউ।

হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন

হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক ফৌজুল কবির কুমার। এখানে বর্তমান ও টানা দুইবারের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে বেগ পেতে পারেন ফৌজুল কবির কুমার। তবে কুমার দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন— এ বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। আওয়ামী লীগ নেতা মৃদুল নন্দী, আজগর আলী বাহদুর ও দিদারুল হক জসিমও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে।

জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন

জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ ইদ্রিচ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অসিত কুমার বড়ুয়া। আরো আছেন সাবেক চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন ফরিদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মরতুজা কামাল মুন্সি, আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া। এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির মধ্য থেকে দুজনের একজনের দলীয় মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত।

ছনহরা ইউনিয়ন

ছনহরা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন ৫ জন। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধা সামশুল আলম দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও ওসমান আলমদার সরোয়ার উদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে বিগত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পর্যালোচনায় এখন পর্যন্ত ওসমান আলমদারের সম্ভাবনা জোরালো।

ভাটিখাইন ইউনিয়ন

ভাটিখাইন ইউনিয়নে জেলা যুবলীগ নেতা আবু সালেহ মোহাম্মদ শাহরিয়ার শাহরু ও বর্তমান চেয়ারম্যান বখতিয়ার উদ্দিনের মধ্য থেকে একজন পাবেন দলীয় মনোনয়ন— এটা অনেকটা নিশ্চিত। এক্ষেত্রে শাহরুকে ঘিরে ব্যক্তিগত নানা বিতর্ক উঠলেও দলের আনুগত্য, আবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং নিজের ভোটকেন্দ্রে একচ্ছত্র আধিপত্য ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রেও তার অবস্থান অপেক্ষাকৃত ভালো হওয়ায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে নিজস্ব বলয়ের কোন ভোটকেন্দ্র না থাকাসহ রাজনৈতিক নানা কারণ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিনও।

কচুয়াই ইউনিয়ন

কচুয়াই ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইনজামুল হক জসিম ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল খালেক রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে। তবে কোন ধরনের মতবদল না ঘটলে জসিমের মনোনয়ন বলা চলে নিশ্চিত। যদিও উপজেলা যুবলীগ নেতা এনামুল হক মজুমদার মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও সাজেদা বেগম ও ঋষি বিশ্বাসের নামও শোনা যাচ্ছে।

খরনা ইউনিয়ন

খরনা ইউনিয়নে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম কারাগারের বেসরকারি পরির্দশক আবদুল হান্নান লিটন দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মনজুরুল আলম ও দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

ধলঘাট ইউনিয়ন

ধলঘাট ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ব্যাবসায়ী আবুল বশর ও বর্তমান চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ। তবে দলীয় ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় উপযুক্ত প্রার্থীর সংকটে মন্দের ভালো হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান রনবীর ঘোষ পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন এটি প্রায় নিশ্চিত। এছাড়াও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ন আহবায়ক মোহাম্মদ রুবেল ও আবদুল আজিজ রয়েছেন মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে।

শোভনদন্ডী ইউনিয়ন

শোভনদন্ডী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান এহসানুল হক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর খালেদ— দুজনই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে মনোনয়ন তালিকায় এক নম্বরে আছেন আলমগীর খালেদ। যদিও বর্তমান চেয়ারম্যান এহসানুল হকের ওপর নানা সময়ে এলাকায় নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। তাছাড়াও আলোচনায় আছে সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসান খোকনের নামও।

দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়ন

দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিমের বিকল্প কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই তিনি আছেন মনোনয়ন দৌড়ে আরও এগিয়ে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছৈয়দের নামও শোনা যাচ্ছে আলোচনায়। বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিম কোনো কারণে বাদ পড়লে মোহাম্মদ ছৈয়দের ভাগ্য বদলে যাবে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাইদগাঁও ইউনিয়ন

হাইদগাঁও ইউনিয়নে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা বিএম জসিম। এছাড়াও আছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মাস্টার সিরাজুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম জুলু ও জিতেন গুহ।

কেলিশহর ইউনিয়ন

কেলিশহর ইউনিয়নে বিকল্প কাউকে খুঁজে পাওয়া না গেলে বর্তমান চেয়ারম্যান সরোজ সেন নান্টুর হাতে উঠতে পারে আবারো নৌকা প্রতীক। তবে যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বাচা, সুমন চক্রবর্তীর নাম আছে আলোচনায়।

বড়লিয়া ইউনিয়ন

বড়লিয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহিনুল ইসলাম সানু ও নুরুল আবছারের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও আছেন ইউনুস তালুকদার।

কিছু ব্যতিক্রম হতেও পারে

মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে কারা এগিয়ে আছেন— দলের বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া আভাস অনুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত কিছু ব্যতিক্রম হলে হতেও পারে।

উল্লেখিত প্রার্থীদের বিপরীতে যারা রয়েছেন, তাদের অনেকে মাঠে তুলমানামূলক জনপ্রিয় বা শক্তিশালী প্রার্থী হলেও বিগত দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড তথা এক্টিভিটি কারও ক্ষেত্রে দুর্বল, আবার কেউবা বিতর্কিত হওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে দূরে পড়ে যাচ্ছেন। আবার কাউকে নিয়ে জনপ্রিয়তার সংকট থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডের মূল্যায়নে বিশ্বস্ত ও আনুগত্য হওয়ায় এগিয়ে রয়েছেন তারা।

সিপি