পতেঙ্গার ‘গ্যাংওয়ারে’ ঢাকাইয়া আকবরের বুকে ৪ গুলি, তরুণীর ফাঁদ
মাস্টারমাইন্ড সরোয়ার, নাকি ছোট সাজ্জাদ?
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের দলত্যাগী সহযোগী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর এবং এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আরেক সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করলেও এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার মূল পরিকল্পনা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ারের।
শুক্রবার (২৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গা সৈকতের পশ্চিম পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। তবে আহত পথচারীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। ঢাকাইয়া আকবরের নামে সিএমপির বায়েজিদ, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বহু মামলা রয়েছে।
ঘটনার সময় আকবরের সঙ্গে একজন তরুণীও ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওই তরুণীকে ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে আকবরকে ঘায়েলের পরিকল্পনা হয়েছিল— এমন কথাও এসেছে কয়েকটি সূত্রে।
ঢাকাইয়া আকবর নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার মঞ্জু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত আকবর ও সরোয়ার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকাইয়া আকবরসহ ৪-৫ জন সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গার ২৮ নম্বর দোকানে নাস্তা করতে বসেন। খাবার অর্ডার দেওয়ার সময় ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ এসে ঢাকাইয়া আকবরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে। এ সময় পালানোর চেষ্টা করলেও আকবর গুলিবিদ্ধ হন। তবে গুলিতে এক পথচারী এক পথচারীও গুলিবিদ্ধ হন।
ঢাকাইয়া আকবরের শরীরে তিন থেকে চারটি গুলি লাগতে পারে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নগর পুলিশের বন্দর বিভাগের এডিসি সোহেল পারভেজ জানান, সন্ধ্যার পর হঠাৎ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে আকবর নামে এক যুবক এবং একজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হন। আকবরের শরীরে ৩-৪টি গুলি লেগেছে। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে সাজ্জাদ খান ওরফে বড় সাজ্জাদ গ্রুপের কর্মী ছিল ছোট সাজ্জাদ ও ঢাকাইয়া আকবর। পরে গুরু বড় সাজ্জাদ থেকে আলাদা হয়ে গ্রুপ করেন ঢাকাইয়া আকবর। এরপর থেকেই ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে ঝামেলা চলতেই থাকে আকবর গ্রুপের। সর্বশেষ ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর দুই গ্রুপের বৈরিতা আরও বাড়তে থাকে। আকবরের একসময়ের সতীর্থ ছোট সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে ধরিয়ে দিতে আকবরের হাত ছিল— এমনটি ধারণা করে থাকে তার অনুসারীরা। এই হামলায় তাদের জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর মধ্যে গত ২৯ মার্চ ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার ও তার লোকজনের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা। এতে সরোয়ার প্রাণে বাঁচলেও মারা যান তার দুই অনুসারী।
এর আগে ১৫ মার্চ ছোট সাজ্জাদকে রাজধানীর একটি শপিংমল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১০ মে রাতে নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নাকেও।
এদিকে ঢাকাইয়া আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কারাগারে আটক ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদ অনুসারী ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে নিয়ে কটূক্তি করে নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রায়ই ভিডিও দিতেন তিনি। তবে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নাও আকবরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দিতেন।
এর আগে চট্টগ্রামের এক প্রবাসীর বাড়িতে চাঁদার দাবিতে বোমা হামলা করে কারাভোগের পর ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকাইয়্যা আকবর সিএমপির বায়েজিদ থানা পুলিশের হাতে লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেপ্তার হন।
ডিজে/সিপি