চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আটক ২০ বাংলাদেশি অবশেষে ফিরেছেন স্বজনদের কাছে। ২২ মাস মালাইবানের কেলিকং জেলে সাজা ভোগের পর তাদের মুক্ত করে সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়। সেখানে স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান ২০ বাংলাদেশিকে স্বজনদের হাতে হস্তান্তর করেন।
মিয়ানমার ফেরত ২০ জন হলেন—জুবায়েদ হোসেন জুয়েল, সরওয়ার কামাল, তারেক মনোওয়ার, নাজিম উদ্দীন, নূর মোহাম্মদ, মো. নজরুল ইসলাম, মো. খোকন, মো. ফাহিম, মো. হাশেম, মো. আব্দুল্লাহ, মনসুর আলম, মো. মোবারক, রফিকুল ইসলাম, আজিজুর রহমান, রবিউল আলম, মোহাম্মদ হেলাল, রফিকুল ইসলাম, মো. ফয়সাল, মো. সাজ্জাদ এবং মো. আসাদ।
জানা গেছে, দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল তারা। প্রথমে তাদের মিয়ানমারের বোটে তুলে দেয় দালালরা। সেখানে যাওয়ার পর হুমকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরে কয়েক লাখ টাকা হাতানোর পর মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তাদের বড় বোটে তুলে দেওয়া হয়। ছয় দিন বোটে থাকার পর তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়।
২০২৩ সালের জুন মাসে ধরা খাওয়ার পর ২২ মাস সাজা ভোগ করে তারা পরে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশে ফেরত আসে।
২০ জন বাংলাদেশি নাগরিক গত ১৩ এপ্রিল বানৌজা সমুদ্র অভিযান নামের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে মিয়ানমার থেকে যাত্রা শুরু করে ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের বিএনএস ঈশা খান জেটিতে পৌঁছেন। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে নৌবাহিনী তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ ব্যবস্থাপনায় তাদের চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আনা হয়, যেখানে স্বজনদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ফেরতপ্রাপ্তদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, এই প্রত্যাবাসন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এখনো যারা বিদেশে বিপদাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন, তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অবৈধ ও অননুমোদিত উপায়ে বিদেশ গমন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। যারা দীর্ঘদিন পর ফিরে এসেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য সতর্কবার্তা।
জেজে/ডিজে