ক্ষমতার ছায়ায় সাবেক মন্ত্রীর সম্পদের পাহাড়, স্ত্রীর পাহাড় কেলেঙ্কারি
বিলাসবহুল বাগান ও সরকারি টাকায় ব্রিজ
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিপুল সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

আদেশ অনুযায়ী, ফৌজিয়া ইসলামের নামে বান্দরবানে ইজারা ও বায়না করা প্রায় ৩০৪ দশমিক ৫৯ একর জমি, ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট ও চট্টগ্রামের হালিশহরের চারতলা ভবনের এক-তৃতীয়াংশ জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর নামে থাকা ১২টি ব্যাংক হিসাব এবং ১৪টি কোম্পানির শেয়ারের সম্পদও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
দুদকের অভিযোগ, জ্ঞাত আয়ের বাইরে ফৌজিয়া ইসলাম ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদের পেছনে অর্থ দিয়েছেন তাঁর স্বামী মো. তাজুল ইসলাম, যিনি এসব অর্থ ‘অবৈধভাবে’ অর্জন করে স্ত্রীর নামে স্থানান্তর করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
তদন্তে দুদক জানতে পেরেছে, ফৌজিয়ার ১১টি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা জমা ও ১৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলনের রেকর্ড রয়েছে। অর্থাৎ, ২৭ কোটির বেশি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে, যার সুনির্দিষ্ট উৎস নেই।
দুদক আশঙ্কা করছে, এসব সম্পদ হস্তান্তর বা গায়েব করার চেষ্টা হতে পারে—এ কারণে মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত জব্দ রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সাড়ে ৯ একর জমি, তিনটি গাড়ি, ৩৪টি ব্যাংক হিসাব এবং ১৬টি কোম্পানিতে থাকা প্রায় ২৬ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ দেয় একই আদালত।
বান্দরবানে ‘ব্যক্তিগত রাজত্ব’
স্থানীয় সূত্র জানায়, বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নে ফৌজিয়া ইসলামের নামে কেনা শতাধিক একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিলাসবহুল বাগান, মাছের প্রকল্প, গরুর খামার ও ব্যক্তিগত বসতবাড়ি। এলাকাবাসীর অভিযোগ—স্থানীয় দরিদ্রদের জমি জবরদখল করে এ সম্পত্তি গড়ে তোলা হয়েছে।
এমনকি এলাকাটিতে সরকারি অর্থে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি আধুনিক ব্রিজ, যার ব্যবহার প্রায় একচেটিয়াভাবে মন্ত্রীর পরিবারের ব্যক্তিগত খামার ও প্রকল্পে। স্থানীয় এলজিইডি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্রিজ নির্মিত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দুদকের দু্ই মামলা
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই মন্ত্রী তাজুল ইসলাম অন্তরালে চলে যান। এরপর থেকেই দুদক তাঁর ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে, যেখানে মোট ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয়।
তাজুল ইসলাম ২০০৮ সাল থেকে টানা চারবার কুমিল্লা-৯ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেন। এখন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাঁর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পদের ভবিষ্যৎ আদালতের ওপর নির্ভর করছে।