রোহিঙ্গাদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট উখিয়ায়, দিনে লাখ টাকার ‘টিকিট-বাণিজ্য’
১৬ দলের ৭টিই রোহিঙ্গাদের, পাহারায় পুলিশ
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা পালংখালীর থাইংখালীতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে রমরমা টিকিট-বাণিজ্য চলছে। রোহিঙ্গাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে দর্শকদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা দর্শক এনে টিকিট বিক্রির নামে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পকেটে ঢোকাচ্ছে আয়োজকরা। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে টুর্নামেন্টে দল দিয়েছে রোহিঙ্গারা।
কোনোরকম বৈধ অনুমতি ছাড়াই থাইংখালী উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে আয়োজন করা হয়েছে এ টুর্নামেন্ট।
জানা গেছে, মূল ফটক থেকে ঢুকলে দিতে হয় জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসে খেলা দেখতে হলে গুনতে হয় বাড়তি ৫০ থেকে ১০০ টাকা। হাজারখানেক চেয়ার ও স্কুলের বেঞ্চ বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ টুর্নামেন্ট কমিটির বিরুদ্ধে।
উখিয়ার সন্তান বয়সভিত্তিক ফুটবল দলের খেলোয়াড় সাহেদ ও নারী জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য রিফার নাম দিয়ে এই টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হয়েছে। তাদের নাম ভাঙিয়ে টুর্নামেন্টে চলছে টিকিট-বাণিজ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টুর্নামেন্টে মোট ১৬টি দলের মধ্যে শুরুতে ৬টি ছিল রোহিঙ্গাদের। পরে লোকসানের আশঙ্কায় টুর্নামেন্ট চলাকালেই একটি স্থানীয় টিম বাদ দিয়ে আরও একটি রোহিঙ্গা দল যোগ করে কমিটি। টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ায় ১৮ ডিসেম্বর।
রোহিঙ্গা দল ও বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দর্শক ধরে রাখতে খেলার ‘টায়’ করা হয়েছে ইচ্ছেমতো। কোনো লটারি পদ্ধতিতে না গিয়ে রোহিঙ্গা দলকে পরের রাউন্ডে তুলতে ম্যানুয়ালি ‘প্রতিপক্ষ’ নির্বাচন করে দেয় আয়োজক কমিটি।
অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা টিমগুলোর প্রতিপক্ষদের হয়রানি করা হয়েছে। খেলায় ওলটপালট সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। প্রথম রাউন্ডে কোর্টবাজার দল ও টেকনাফের একটি দল রেফারি ও কমিটির বিরুদ্ধে আঙুল তোলে।
জানা গেছে, টুর্নামেন্ট কমিটিতে ৯৮ জন সদস্য। এরা লাভের আশায় জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন। এদের মধ্যে মাদক কারবারিও রয়েছে।
এদিকে টুর্নামেন্ট চলাকালে গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রোহিঙ্গা টিমের তৃতীয় খেলার দিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় থাইংখালী ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের ৫ বছরের কন্যা নূরী আক্তার। রোহিঙ্গা দর্শকবোঝাই একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (টমটম) ধাক্কা লেগে মাথায় ও শরীরে জখম হয় তার। গুরুতর আহত শিশু নূরী বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি রশিদ আহমদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে এ ঘটনায় শিশুটিকে ক্ষতিপূরণ দেবেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান এবং প্রতিবেদকের সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে ফোন কল কেটে দেন।
খেলায় রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এ নিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে একবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমরা থানা-পুলিশকে অবহিত করেছি এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিজে