লোকই নেই, তবু ৩০০ কোটি টাকার গাড়ি ও যন্ত্রপাতি কিনতে চায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

নানা অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন

1

জনবল নিয়োগ ছাড়াই প্রায় ৩০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনতে বিশেষ উৎসাহী হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য এসব আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ বাবদ মোট ৫৪১টি নতুন যান ও যন্ত্রপাতি ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। বিপুল টাকায় যন্ত্রপাতি কেনায় বিশেষ উৎসাহ থাকলেও নতুন যান ও যন্ত্রপাতি চালানোর কোনো লোকবল নিয়োগের কথা প্রস্তাবের কোথাও নেই। আবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এমন কোনো বাড়তি জনবল নেই যে, যন্ত্রপাতিগুলো কেনার পর তারা সেগুলো পরিচালনা করবে।

‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় এমন বিস্ময়কর প্রস্তাব পাওয়ার পর পরিকল্পনা কমিশন এ নিয়ে তুলেছে প্রশ্ন। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিদিন তিন হাজার ৬৩ মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা গেলেও অবশিষ্ট এক হাজার ৪৭৮ মেট্রিক টন বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরিবেশে থেকেই যায়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যেসব আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি কিনতে চায়, তার মধ্যে রয়েছে— ২০০টি আইপি ক্যামেরা, পাঁচটি মনিটরিং পিকআপ, পাঁচটি মোটরসাইকেল, তিন টনের ২৫টি ডাম্প ট্রাক, পাঁচ টনের ২৫টি ডাম্প ট্রাক, সাত টনের ১০টি ডাম্প ট্রাক, চারটি লোডার, পাঁচটি স্কিড স্টিয়ার লোডার, দুটি ছোট হুইল লোডার, তিনটি মাঝারি হুইল লোডার, একটি অ্যাম্ফিবিয়াস এক্সকেভেটর, একটি ডিমোলেশন এক্সকেভেটর।

আরও আছে দুটি গ্রিপল এক্সকেভেটর, ছোট আকারের দুটি চেইন এক্সকেভেটর, মাঝারি আকারের দুটি চেইন এক্সকেভেটর, লম্বা দুটি চেইন এক্সকেভেটর, দুটি টায়ার এক্সকেভেটর, ১১টি মিনি গার্বেজ ট্রিপার, দুটি মাঝারি চেইন ড্রোজার, দুটি বড় চেইন ড্রোজার, দুটি রোড সুইপিং মেশিন, ২৬ টনের দুটি ল্যান্ড কমপ্যাক্টর, একটি ক্লিনিং জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন, ২০০টি মোবাইল ওয়েস্ট কনটেইনার, ১০টি মোবাইল ওয়েস্ট কনটেইনার ক্যারিয়ার, তিনটি ভাইব্রেটরি টেনডেম রোলার, তিনটি স্ট্যাটিক থ্রি হুইলার। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হবে গাড়ি রাখার দুটি শেড।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকায় আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেই প্রকল্পের জনবল কাঠামোতে জনবল নিয়োগ ও আউটসোর্সিংয়ের সংস্থান নেই। অথচ প্রস্তাবিত যান ও যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত লোকবল দরকার। সেটা না থাকলে কেনা যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হতে থাকবে। এতে অপচয় হবে সরকারি অর্থের।

নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবে পাঁচটি পিকআপ কেনার কথা বলা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পে অতিরিক্ত জনবলের সংস্থান না থাকায় পিকআপ কেনার প্রস্তাব বাদ দেওয়া যেতে পারে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রতিটি আইটেমের দরের ভিত্তি হিসেবে বাজারমূল্য উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক এসব যন্ত্রপাতির বাজারমূল্য সিটি কর্পোরেশন কিভাবে ঠিক করেছে— সেই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত প্রকল্পে নতুন যান ও যন্ত্রপাতি কেনার পাশাপাশি সবগুলোর জন্য আলাদা করে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রতিটি যান-যন্ত্রপাতিরই অন্তত এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকবে। সেক্ষেত্রে ওই এক বছর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতিগুলো মেরামত করে দেবে। এ কারণে আলাদা করে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে রাখার যুক্তি কী— এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলছে, যেমন ডাম্প ট্রাকের খুচরা যন্ত্রাংশ কেনারই দরকার নেই।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে দেওয়া প্রস্তাবে হাস্যকর বেশকিছু ভুলও রয়েছে। এসব শনাক্ত করে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হলেও প্রস্তাবে লেখা হয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। সেখানে লেখা হয়েছে পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনার কথা, অথচ এখন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।এছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত বলা হলেও এটি মূলত চট্টগ্রামে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর চার বছর মেয়াদে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে— এমন প্রতিশ্রুতি জানানো হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দেওয়া ওই প্রস্তাবে।

পরিকল্পনা কমিশন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ছাড়াও যান ও যন্ত্রপাতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জিরো বর্জ্যের বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা— সেটা জানতে চাওয়া হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

1 মন্তব্য
  1. মোহাম্মদ আরফাতুর রহমান বলেছেন

    হইতো ঢাকার কোন একটা সিটি কর্পোরেশন হতে এটা কপি করে নেওয়া হইছে

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।

ksrm